জলবায়ু ও দখলের কারণেই নদীগুলো মৃত

বিবিসি২৪নিউজ,প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়,প্রবাসী কর্মীরা মারা গেলে মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় । বিমানবন্দরে লাশ হস্তান্তরের সময় সেটি পরিবহন ও দাফনের খরচ হিসেবে দেওয়া হয় সরকারি অনুদান।এছাড়া, মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান, মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের আদায়ের ব্যবস্থাও করে থাকে তাদের অধীন সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে এসব সুবিধা পান প্রবাসী কর্মীর স্বজনরা।
এ প্রসঙ্গে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস বলেন, ‘বিদেশে প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বিক কল্যাণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য কোনও প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ বা সমস্যা থাকলে তা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ১৫৪ জন প্রবাসীর মৃতদেহ এসেছে বাংলাদেশে বলে জানান ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম। এই ১১ মাসে ২ হাজার ৯৫২ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃতদেহ বহন ও দাফনের জন্য স্বজনদেরকে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এছাড়া সংস্থাটির কাছ থেকে আর্থিক অনুদান হিসেবে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার ১৯২ টাকা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৪৪ জন মৃত প্রবাসী শ্রমিকের স্বজনরা।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র যাচাই,কার্ড পূরণ,কর্মীদেরকে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক রয়েছে। তাদের মাধ্যমে প্রবাসী মৃত কর্মীদের লাশ দেশে আসার পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর, পরিবহন ও দাফনের জন্য চেক প্রদান করা হয়।
মৃতদেহ দেশে আনা
প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশি কর্মীর লাশ পরিবারের মতামত নিয়ে দেশে আনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। কোনও মৃতের পরিবার সংশ্লিষ্ট দেশে লাশ দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে সেই ব্যবস্থাও করা হয়। মৃতের লাশ দেশে প্রেরণে নিয়োগকর্তা খরচ বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ও মৃতের পরিবার লাশ দেশে আনার জন্য খরচ বহনে সক্ষম না হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়।
মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সহযোগিতা পেতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করতে হয়। আবেদন ফরমের নমুনা কপি পাওয়া যাবে এই সংস্থার ওয়েবসাইটে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অথবা সরাসরি বোর্ডেও এই আবেদন করা যায়।
বিদেশে বৈধভাবে যাওয়া মৃত কর্মীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর প্রত্যেক পরিবার আর্থিক অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৩ লাখ টাকা। এই অনুদান পেতে মৃত প্রবাসী কর্মীর স্বজনকে দাখিল করতে হয় বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
এর মধ্যে রয়েছে— ১. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান,পৌরসভার মেয়র,সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরের কাছ থেকে দাফতরিক প্যাডে মৃতের পরিবারের সদস্য সনদ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার,সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে। ২. ৪০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দায়মুক্তি সনদ, অঙ্গীকারনামা ও ক্ষমতা অর্পণপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান,পৌরসভার মেয়র,সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে।
৩. মৃতের পাসপোর্টের ফটোকপি, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র, মৃত্যু সনদের (ডেথ সার্টিফিকেট) সত্যায়িত ফটোকপি। ৪. অর্থগ্রহণকারীর ব্যাংক হিসাব নম্বরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রত্যয়ন পত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্টের মূল কপি। নাবালক সন্তান থাকলে নাবালক সন্তানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাব নম্বর ও প্রত্যয়নপত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ)। ৫. পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর কর্তৃক সত্যায়িত ১ কপি ছবি এবং সহকারী পরিচালক, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কর্তৃক ১ কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের নমুনা কপি পাওয়া যাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে।
মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ
প্রবাসী কর্মী মারা গেলে বিদেশে নিয়োগকর্তা, সংস্থা,ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান থেকে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা নিয়ে থাকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এছাড়া প্রবাসী কর্মীর বকেয়া বেতন, সার্ভিস বেনিফিট ও ইন্স্যুরেন্স সুবিধা পাওনা থাকলে তা আদায় করে তার স্বজনকে তা পাওয়ার ব্যবস্থাও করে থাকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এজন্য মৃত প্রবাসীর কর্মীর স্বজনকে বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
আবেদন নিয়ে স্বজনরা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অথবা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কার্যালয়ে যেতে পারেন। ঠিকানা: প্রবাসী কল্যাণ ভবন, ৭১-৭২ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডেন, রমনা, ঢাকা। যে কোনও অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য বোর্ডের উপ-পরিচালক (কল্যাণ) শরিফুল ইসলামকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মোবাইল নম্বর ০১৯৭১৪৩০২০৩ ও ফোন ৯৩৫৮৯৭৬ নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারেন স্বজনরা।