শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

BBC24 News
সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » টিসিবির পণ্য কার্ডঃ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকে কার্ডই পাননি, পেয়েও ভোগান্তি
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » টিসিবির পণ্য কার্ডঃ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকে কার্ডই পাননি, পেয়েও ভোগান্তি
৮০৬ বার পঠিত
সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

টিসিবির পণ্য কার্ডঃ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকে কার্ডই পাননি, পেয়েও ভোগান্তি

---বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকাঃ বাংলাদেশে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকার। বাজারের চেয়ে বেশ কম দামে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ পেয়ে খুশি মানুষ।

অবশ্য এই কার্যক্রমের প্রথম দিন দুটি চিত্র দেখা গেছে। প্রথমত, ভিড় ছিল ব্যাপক। সরকারের দেওয়া ‘ফ্যামিলি কার্ড’ হাতে নিয়েও প্রচণ্ড রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মানুষকে পণ্য কিনতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকে কার্ডই পাননি। তাঁদের কেউ কেউ তবু পণ্যের আশায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পণ্য দেওয়া হয়নি।

উত্তরের জেলা বগুড়ার উদাহরণটি দেওয়া যাক। গতকাল সকাল নয়টা থেকে বগুড়া সদরের ফাঁপোড় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে টিসিবির পণ্য কিনতে অপেক্ষা করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আফসার (৬৬), যিনি পেশায় একজন ঠেলাগাড়ির চালক। আফসার বলেন, কার্ড পেতে তিনি স্থানীয় ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্যকে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছিলেন। ইউপি সদস্য তাঁকে জানিয়েছেন, ইউনিয়নকে বরাদ্দের চেয়ে ৭০টি কার্ড কম দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আফসার কার্ড পাননি। উল্লেখ্য, কার্ড ছাড়া লাইনে দাঁড়ানোয় আফসারকে পণ্য দেওয়া হয়নি।

বিপরীতে একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাতেম আলী ও তাঁর ছেলে কার্ড পেয়েছেন। হাতেম বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তাঁর ছেলের কার্ডে পেশা হিসেবে আইনজীবী লেখা আছে। যদিও হাতেম দাবি করেন, ছেলে আসলে আইনজীবীর সহকারী।

হাতেম আলী গতকাল সকাল ১০টার দিকে দুটি কার্ড হাতে নিয়ে পণ্য কিনতে যান টিসিবির ট্রাকের কাছে। তাঁর কার্ডটিতে পেশা হিসেবে শ্রমিক লেখা রয়েছে। তিনি এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ফাঁপোড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের ব্যাখ্যা হলো, সরকারি কর্মচারী হলেও টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য কার্ড প্রদানে কোনো বাধা নেই। ‘খানা’ (যে কয় সদস্যের রান্না এক চুলায় হয়) আলাদা হলে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে টিসিবির কার্ড দেওয়া যায়। অনেকের কার্ড না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই ইউনিয়নে ভোটার প্রায় ৮ হাজার। অথচ কার্ড বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৩৭৫টি।

দেশে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ১ কোটি পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দিচ্ছে সরকার। এই কার্ড দিয়ে একটি পরিবার দুই দফা ১১০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দরে দুই কেজি মসুর ডাল ও ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবে। প্রথম ধাপের কার্যক্রম চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। আগামী ৩ এপ্রিল শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের বিক্রি কার্যক্রম। তখন যুক্ত হবে ৫০ টাকা দরে দুই কেজি করে ছোলা।সারা দেশে গতকাল স্থানীয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম শুরু করে। রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, বগুড়া, খুলনা, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কোথাও বিক্রি শুরু করতে দেরি হয়েছে, কোথাও ভিড় বেশি ছিল, তাই কেউ কেউ পণ্য পাননি। কোথাও কার্ড হাতে নিয়ে মানুষকে এক কেন্দ্র থেকে অন্য কেন্দ্রে দৌড়াতে হয়েছে।

সাধারণ অভিযোগটি ছিল, কার্ড না পাওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, কার্ড তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তাঁদের অনুসারী ও পছন্দের লোকদের কার্ড দিয়েছেন। এ ছাড়া টিসিবি এত দিন যে পণ্য বিক্রি করেছে, সেখানে সবার জন্য লাইনে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল। এখন রাজধানী ছাড়া অন্য জেলায় শুধু কার্ডধারীদের পণ্য দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাকিদের সুযোগ থাকল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে পরিবারের (খানা) সদস্যসংখ্যা চারের চেয়ে কিছু বেশি। এক কোটি পরিবার মানে চার কোটি মানুষ। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, করোনাকালে আয় কমা ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে ছয় থেকে সাত কোটি নিম্নবিত্ত এখন কষ্টে রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন কোটির মতো দরিদ্র। বাকিরা ভঙ্গুর অবস্থানে থাকে (ভালনারেবল পুওর)।

বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, অনেকেই এখন সংকটে পড়েছেন, যাঁরা সরকারের কোনো ধরনের তালিকায় নেই। কিন্তু সহায়তা দরকার। তাঁদের জন্য একটি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য দেওয়ার উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তবে এর আওতা বাড়াতে হবে।কার্ড নিয়েও খালি হাতে ফেরা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় হক স্টিল মিল এলাকায় গতকাল বেলা ১১টার দিকে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। সেখানে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাতটা থেকে শত শত নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তীব্র গরমে তাঁরা অস্থির। বেলা দুইটার দিকে টিসিবির পণ্য শেষ হয়ে যায়। ফলে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষকে খালি হাতে ফেরত যেতে হয়।

হাফেজা আক্তার নামের একজন বলেন, ‘প্রচণ্ড রোদে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য পাইনি। এখানে মালামাল শেষ। তাই আমাদের অন্য জায়গায় যেতে বলেছে।’

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় তিনটি কেন্দ্রে গতকাল টিসিবির পণ্য বিক্রি হয়। দুটিতে সকাল নয়টায় পণ্য বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও প্রায় তিন ঘণ্টা দেরি হয়। এ ছাড়া দূরদূরান্ত থেকে এসে অনেক কার্ডধারীকে খালি হাতে ফিরতে হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শুরুর দিন ৫০ শতাংশ কার্ডধারীকে পণ্য দেওয়া হবে, সে বিষয়টি তাঁদের জানানো হয়নি। তাঁরা প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা কেন্দ্র খোলার দাবি জানান।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমি কেন্দ্রে দুপুর সোয়া ১২টায় পণ্য বিক্রি শুরু হয়। এ সময় উপকারভোগীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শেখ ইখলাছ আলী নামের একজন ক্রেতা বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে এক দিন করে পণ্য দিলে মানুষের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

---

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে পণ্য বিক্রি শুরু হওয়ার একপর্যায়ে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলের দুই দিকে দুটি তেলের বোতল ও অন্যান্য পণ্য ঝুলিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি নজরে পড়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরীনা রহমানের। তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন, তাঁর নাম মামুনুর রশীদ। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি কার্ড বরাদ্দ হয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবার সচ্ছল। এ সময় তাঁর কার্ড বাতিল করে পণ্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়।সাশ্রয়ী, তবে কর্মসময় নষ্ট

বাজারে ভোজ্যতেলের লিটার যখন সরকার নির্ধারিত ১৬৮ টাকা, তখন টিসিবি একই তেল বিক্রি করছে ১১০ টাকায়। একই ভাবে বড় ছাড় পাওয়া যাচ্ছে চিনি ও ডালেও। সব মিলিয়ে এক দফা পণ্য নিতে পারলে মানুষের সাশ্রয় হয় অন্তত ২৩০ টাকা।

অবশ্য লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই গতকাল বলেছেন, কার্ড পেয়েও পণ্য নিতে চার-পাঁচ ঘণ্টা লেগে যাওয়ায় তাঁদের কর্মসময় নষ্ট হয়। দেখা যাচ্ছে, সেখানে কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে দিনের পুরো আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।

জামালপুর পৌরসভার পাথালিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় টিসিবির একটি ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন অটোরিকশাচালক মো. সিদ্দিক। সকাল সাড়ে নয়টায় দাঁড়িয়ে এক ঘণ্টা পর ট্রাকের কাছে পৌঁছালে কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, সেখানে তাঁর নাম নেই। তিনি বলেন, ‘স্যাররে (ট্রাকে দায়িত্বরত ব্যক্তি) কাগজ দিলাম। দেইখা কইল, পশ্চিমপাড়া যাও গা। দৌড়ায় আইলাম পশ্চিমপাড়া। সেখান থাইকা কইতাছে যাও গা ছাতার মোড়ে। আবার ছাতার মোড় গেলাম। ছাতার মোড় থেকে আবার পশ্চিমপাড়া আইলাম। এই যে চার-পাঁচবার পাকটা পাড়লাম (দৌড়াদৌড়ি), এইডা কোনো হইল। দিনটাই তো কামাই (মাটি) হইল।’

এদিকে কেউ কেউ বলছেন, একই কার্ডে তাঁরা যদি কম দামে চাল পেতেন, তাহলে তাঁদের কষ্ট কমত। খুলনা নগরের শশীভূষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে টিসিবির পণ্য কিনে ফেরার সময় আজিমুন্নেসা নামের এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, ‘এত কষ্ট কইরে যেসব মাল পালাম, তাতে ভালো হুয়েছে; তবে সঙ্গে কডা চাল দিলি খাইয়ে বাঁচতাম।’



আর্কাইভ

ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে কঠিন শর্ত দিল সৌদি
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করলো তুরস্ক
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশন গৃহীত
সাংবাদিককে হুমকি গ্রহণযোগ্য নয়: মিলার
উপজেলা ভোটে প্রভাব বিস্তার করবেন না, মন্ত্রী-এমপিদের ইসি
কংগ্রেস পাকিস্তানের ‘মুরিদ’: মোদি
নিউইয়র্কের আদালতে ট্রাম্পকে ৯ হাজার ডলার জরিমানা
উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে বিদেশে অপপ্রচার চালানো হয় : আরাফাত
অর্থ পাচারের মামলায় জামিন পেলেন ড. ইউনূস
রাফায় অভিযানের হুঁশিয়ারি ইসরাইলের, সতর্কবার্তা জাতিসংঘের