মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » পদ্মা সেতুতে ৩০ দিনে টোল আদায় ৭৬ কোটি টাকা
পদ্মা সেতুতে ৩০ দিনে টোল আদায় ৭৬ কোটি টাকা
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকাঃ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাস পেরিয়েছে। অবশ্য সেতু দিয়ে স্বাভাবিক যান চলাচল শুরু হয় উদ্বোধনের পরদিন গত ২৬ জুন থেকে। গত ৩০ দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে ছয় লাখের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি টাকার বেশি।
পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে যানবাহন চলাচল ও আয়ের যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, প্রথম মাসের চিত্র এর কাছাকাছি। ২০০৫ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে যানবাহন চলাচল ও সেতু থেকে আয়ের একটা পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
পরে ২০১০ সালে নকশা প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ৩৫ বছরে যানবাহনের সংখ্যা ও আয়ের একটা ছক তৈরি করে। এর ওপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালের আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঋণ চুক্তি করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে আয়, ব্যয় ও মুনাফার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশের বৃহত্তম সেতু পদ্মা সেতু, এটা ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বিতীয় বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সেতু, দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সেতু দুটি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীন।
দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগের লক্ষ্যে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হয় ১৯৯৮ সালে। প্রথম বছর সেতুটি থেকে ৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর প্রথম এক বছরে যে আয় হয়েছিল, পদ্মা সেতুতে প্রথম মাসেই এর চেয়ে বেশি আয় হয়েছে। অবশ্য বঙ্গবন্ধু সেতুর চেয়ে পদ্মা সেতুতে টোলের হার প্রায় দ্বিগুণ।শুরুতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল হার আরও কম ছিল। পদ্মা সেতুর প্রথম এক মাসের বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, এ সেতু দিয়ে দৈনিক গড়ে ২১ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে প্রায় একই হারে যানবাহন চলাচল করে। অবশ্য পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে মোটরসাইকেল চলতে পারে।
সেতু বিভাগের হিসাবে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৭০৪ কোটি টাকা। এই সেতু থেকে প্রতিদিন আয় হয়েছে গড়ে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা করে।
পূর্বাভাস ও পদ্মা সেতুতে যান চলাচল
৩০ দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৫৩টি। এ সময় প্রতিদিন যানবাহন চলেছে গড়ে ২১ হাজার। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ৭৬ কোটি ৯ লাখ ৮২ হাজার ৩৫০ টাকা। অর্থাৎ দিনে আয় হয়েছে গড়ে ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি।
এ পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের ধারা দেখে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বছরের শেষভাগে এসে পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি যানবাহন চলাচল ও আয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, দিন দিন সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাকের চলাচল বাড়বে। এ ছাড়া মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেওয়া হলে পূর্বাভাসের চেয়ে দ্বিগুণ যানবাহন চলাচল করবে। এতে আয়ও বেড়ে যাবে।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পর ২৬ জুন থেকে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল শুরু করে। প্রথম দিনেই এযাবৎ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়। এর ৭৫ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল। কিন্তু ওই দিন রাতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর সেতু দিয়ে এই বাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন যানবাহন চলাচলের সংখ্যা ২৩ হাজারের কাছাকাছি নেমে আসে। মোটরসাইকেল বন্ধের পর সর্বাধিক ৩২ হাজার ৪৪৬টি যানবাহন চলে ১১ জুলাই, পবিত্র ঈদুল আজহার পরদিন।পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর প্রতিদিন পদ্মা সেতু দিয়ে গড়ে ২৩ হাজার ৯৫৪টি যানবাহন চলাচল করার কথা। ২০২৯ সালে তা হবে দৈনিক ৩৪ হাজার ৭২৫টি। ২০৫০ সালে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন যানবাহন চলাচল করবে ৬৬ হাজার ৮২৯টি।
পূর্বাভাস অনুসারে, পদ্মা সেতু থেকে প্রথম বছর আয় হবে ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। বর্তমানে হারে টোল আদায় হলেও আয় দাঁড়াবে ৯০০ কোটি টাকার মতো। পূর্বাভাস বলছে, ৩৫ বছরে এই সেতু থেকে আয় হওয়ার কথা ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে সব টাকা সেতুর নির্মাণ ও পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ঘরে যাবে না। প্রথমেই আয় থেকে সরকারকে ভ্যাট দিতে হবে। টোল আদায়কারীর পেছনে খরচ আছে। এরপর যা থাকবে, তা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিশোধ করতে হবে ঋণের কিস্তি। এসব ব্যয়ের পর টাকা থাকলে তা সেতু কর্তৃপক্ষের মুনাফা হিসেবে বিবেচিত হবে।
পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হলেও এ টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ১ শতাংশ সুদে ৩৫ বছরে এ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য তিন মাস পরপর কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে ১৪০ কিস্তিতে ঋণের টাকা (সুদ ও আসলে) পরিশোধ করা হবে।এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা আছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান সরকারের ঋণ মওকুফ ফান্ডের অর্থ ৩০০ কোটি টাকা। এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে না।
ফলে সেতু বিভাগকে আসল হিসেবে ২৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর সঙ্গে বাড়তি ১ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। অর্থাৎ সুদ-আসলে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন বলেন, পূর্বাভাসে মোটরসাইকেল ধরা ছিল। এখন মোটরসাইকেল চলছে না। সে হিসাবে বলা যায়, পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি আয় হচ্ছে, যানবাহন চলাচল করছে। এ ধারা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকবে বলে আশা করছেন।
যেভাবে পরিশোধ করা হবে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিতে টোলের টাকা ব্যয়ের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সেতুর সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণে টোল থেকে আয়ের সাড়ে ৭ শতাংশ ব্যয় হবে।
এরপর টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের খরচ মেটাতে হবে। বর্তমানে পদ্মা সেতুর টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ বছরে ৬৯৩ কোটি টাকা দিতে হবে।
এরপর প্রতি ১০ বছর পরপর সেতুর বড় ধরনের মেরামত করতে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চালুর দশম বছরে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করার জন্য ধরা হয়েছে। ২০তম বছরে ব্যয় করা লাগতে পারে এক হাজার কোটি টাকা। ৩০ ও ৪০তম বছরে ব্যয় হবে দেড় হাজার কোটি টাকা করে।
সেতু বিভাগ যে টোল আদায় করছে, তা থেকে প্রথমেই ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কাটা যাবে। অবচয় হবে মোট নির্মাণব্যয়ের ২ শতাংশ হারে। সব ব্যয় শেষে যে টাকা থাকবে, তা থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। আর কিস্তি পরিশোধের পর যে টাকা (মুনাফা) থাকবে, তার ওপর ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দেবে সেতু বিভাগ।
ব্যয় মিটিয়ে মুনাফা ত্বরান্বিত করতে প্রতি ১৫ বছর পরপর টোল ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। পরিকল্পনামতো টোল বাড়ানো হলে ২০৫৩ সাল নাগাদ একটি প্রাইভেট কার পারাপারে দুই হাজার টাকার বেশি টোল দিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন, পদ্মা সেতুর দুটি লক্ষ্য ছিল—১. মানুষ ও মালামাল সহজে নদী পারাপার করে সময় বাঁচানো; ২. দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। প্রথম লক্ষ্য ভালোভাবেই পূরণ হচ্ছে। তবে অর্থনীতিতে কী পরিমাণ যোগ হচ্ছে, তা নির্ধারণ করতে সময় লাগবে।
পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা ও টোল আয় সম্পর্কে সামছুল হক বলেন, শুরুতে অনেক আবেগের যাত্রা (ইমোশনাল ট্রিপ) ছিল। তুলনামূলকভাবে ছোট গাড়ির সংখ্যা বেশি। ধীরে ধীরে আবেগের যাত্রা কমে যাবে; তবে সেতুতে যান চলাচল কমবে না।কর্তৃপক্ষকে এটা মাথায় রাখতে হবে, টোল আয় বৃদ্ধি এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান বাড়াতে হলে বাণিজ্যিক যানবাহনের (বাস ও মালবাহী যান) চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হবে। কোনোভাবেই যেন আবেগের যাত্রা অন্য যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।




অপমানিত বোধ করছেন’ পদত্যাগ করতে চান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার
জাতীয় নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি:জাতির উদ্দেশে ভাষণে সিইসি
দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ তফশিল ঘোষণার পর কার্যকর: প্রেস সচিব
মস্কোতে রুশ সামরিক বিমান বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৭
খালেদা জিয়ার জন্য ‘উদ্বিগ্ন’ শেখ হাসিনা
ইতালি থেকে জঙ্গি বিমান কিনতে সম্মতিপত্র সই বাংলাদেশের
ভারতে আবারও শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
বিদেশে নেওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়াকে
দেশের কেউ ম্যান্ডেট দেয়নি যে এত দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে’
জাপানে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সুনামির আঘাত 