
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » তুরস্ক যে কারণে প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পক্ষ নিলো?
তুরস্ক যে কারণে প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পক্ষ নিলো?
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যেখানে বেশিরভাগ দেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে, সেখানে তুরস্ক ও ইসরায়েল ব্যাতিক্রম। তুরস্ক প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে, আর চিরাচরিতভাবে ইসরায়েল তার অবস্থান জানিয়েছে মিত্র দেশ ভারতে পক্ষে।বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে রয়েছে মতাদর্শিক ঘনিষ্ঠতা, সামরিক সহযোগিতা এবং ইসলামি বিশ্বের নেতৃত্বে ভূমিকা রাখার তুরস্কের ঐতিহাসিক আকাঙ্ক্ষা।
তুরস্ক যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে দুই দেশকে সরাসরি ও সুস্থ আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল।
তবে সংঘাত চলাকালে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সরকার পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে সমর্থন দিয়েছে। এটা যে শুধুমাত্র বক্তব্যে সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়, পুরো বিষয়টি সামরিক সহায়তার মাধ্যমেও স্পষ্ট হয়েছে।
গত শুক্রবার ভারত অভিযোগ করে, পাকিস্তান তুরস্কের তৈরি ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করে তাদের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। পাল্টা অভিযোগে পাকিস্তান জানায়, ভারত ইসরায়েলি ড্রোন ব্যবহার করছে।
এর মধ্যে তুরস্কের একটি সি-১৩০ জেট পাকিস্তানে অবতরণ করে। তুরস্ক বলেছে, এটি ছিল জ্বালানি সংগ্রহের জন্য। এর আগে তুরস্কের একটি যুদ্ধজাহাজ করাচি বন্দরে নোঙর করে, যেটিকে বন্ধুত্বের নিদর্শন বলেই উপস্থাপন করে তারা।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, পাকিস্তানের জনগণ তার ভাইয়ের মতো। তিনি তাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করছেন।
সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক তালমিজ আহমেদ বলেন, তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে মতাদর্শিক মিল রয়েছে। ইসলামি ইস্যুতে এরদোয়ান বরাবরই সক্রিয়। কাশ্মীরকে তিনি একটি ইসলামি ইস্যু হিসেবে দেখেন বলেই পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতাও খুবই গভীর ও পরীক্ষিত। পাকিস্তানের অনেক জেনারেলের সঙ্গে তুরস্কের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরদোয়ান নিজেকে একজন ইসলামিস্ট নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তিনি ইসলামি ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব দেন। তা ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে তার যে পুরনো বন্ধুত্ব সেটি নিয়ে ঝালাই করছেন। এরদোয়ান প্রায়ই কাশ্মীর নিয়ে কথা বলেন। তিনি মনে করেন এটি ইসলামি ইস্যু। তাই পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে তিনি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফর করেন এরদোয়ান। সে সময় এক যৌথ বিবৃতিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মন্তব্য করেন, তুর্কিরা ৬০০ বছর ভারত শাসন করেছে। যদিও এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন পাকিস্তানের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ মুবারক আলি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত নভোদ্বীপ সুরি বলেছেন, পাকিস্তানের সামরিক অস্ত্রবাজারে প্রবেশ করতে চায় তুরস্ক। এ ব্যপারে তিনি নিশ্চিত। কেননা, শুধু মতাদর্শিক কারণে নয়, বরং পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা খাতে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেও কাজ করছে তুরস্ক।
এরদোয়ানের দেশ দীর্ঘদিন ধরে ইসলামি বিশ্বের নেতৃত্ব নিতে চাচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবের প্রভাবের কারণে সে প্রয়াস সফল হয়নি। ২০১৯ সালে এরদোয়ান মালয়েশিয়া, ইরান ও পাকিস্তানকে নিয়ে একটি বিকল্প ইসলামি নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তবে সৌদি চাপের মুখে পাকিস্তান সেবার সরে দাঁড়ান।
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) পাকিস্তানকে কাশ্মীর ইস্যুতে সমর্থন দিয়ে আসছে। সম্প্রতি ভারতের সামরিক পদক্ষেপের পর ওআইসি উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং কাশ্মীরকে দুই দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বলে উল্লেখ করে। আজারবাইজান ইস্যুতে তুরস্ক ও পাকিস্তান একই অবস্থানে ছিল। পাকিস্তান একমাত্র দেশ যারা এখনো আর্মেনিয়াকে স্বীকৃতি দেয়নি। তুরস্ক, পাকিস্তান ও আজারবাইজান—আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের ইসলামিক জিও-পলিটিকাল জোট গড়তে চায়।
তালমিজ আহমেদ বলেন, তুরস্ক চায় অটোমান আমলের মতই পশ্চিম এশিয়ায় তার প্রভাব ফিরিয়ে আনতে, যেখানে পাকিস্তানকে সে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্কের এই অবস্থান ভারতের জন্য তাৎক্ষণিক বড় মাথাব্যথা নয়। কারণ, ভারতের কৌশলগত বন্ধুত্ব রয়েছে সৌদি আরব, ইসরায়েল, কাতার, আমিরাত ও ইরানের সঙ্গে। এসব দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যথেষ্ট শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক। তবে, কাশ্মীর ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থান ভবিষ্যতেও ভারতের জন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকতে পারে।