
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » আমেরিকা | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম » যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলেন জয়
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলেন জয়
বিবিসি২৪নিউজ,অনলাইন ডেস্ক: গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। সে দিনই দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। শীর্ষ নেতারাও প্রায় সবাই ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন। অনেকেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। এর মধ্যে দিয়ে দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। সারা দেশের নেতাকর্মীরাও দিগ্ভ্রান্ত। এমতাবস্থায় দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার ক্ষীণ সম্ভাবনাও শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং ভুল সিদ্ধান্তে শেষ হয়ে যায়। ছাত্র-জনতার দাবি ও আন্দোলনের মুখে দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব ঘটনার মধ্যে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়েছেন হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। শেখ হাসিনার পরে যাকে দলের ভবিষ্যৎ কান্ডারি মনে করা হতো তার এমন সিদ্ধান্তে আরও হতাশ ও দিগ্ভ্রান্ত তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থক। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত ‘নৌকাডুবি’ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এ সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তবে আওয়ামী লীগ তছনছ হয়ে যায়। দলেও ভাঙন দেখা দেয়। প্রশ্ন উঠেছিল- আদর্শের উত্তরাধিকার নাকি রক্তের উত্তরাধিকার দলের নেতৃত্বে আসবে। এমন বাস্তবতায় ১৯৮১ সালের ১৭ মার্চ দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নিয়ে তিনি সারা দেশে দল পুনর্গঠনে কাজ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে অর্থাৎ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। ২০০১-২০০৬ ক্ষমতার বাইরে থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন নেতাকর্মীরা। এরপর এক-এগারো পেরিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার পরে সজীব ওয়াজেদ জয়কেই মনে করা হতো পরবর্তী ‘কান্ডারি’। এ কারণে স্থায়ীভাবে দেশের বাইরে বসবাস করলেও সব সময় জয়কে দেশ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির ‘ফ্রন্টলাইনে’ রাখার চেষ্টা করেছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাকে নিজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে রেখেছিলেন। দেওয়া হয়েছিল দলের সদস্য পদও। বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরকার ও দলে জয়ের ‘অবদানের’ কথা প্রায়ই জানানোর মাধ্যমে তাকে মূলত দলের ভবিষ্যৎ নেতা হিসাবেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো।
অন্যদিকে বিগত বছরগুলোতে দল ও সরকারে জয়ের একচ্ছত্র প্রভাব ছিল। ‘জয়ের কোটা’য় কেবিনেটে মন্ত্রী এবং সংসদে এমপি থাকার আলোচনা ছিল দলের অভ্যন্তরেও। বিশেষ করে আইসিটি সেক্টরসহ আরও বেশ কয়েকটি সেক্টর পুরোটাই ছিল জয় ও তার পছন্দের লোকদের ‘নিয়ন্ত্রণে’। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনেও ছিল একই অবস্থা। পুরোনো আওয়ামী লীগারদের পাশাপাশি সজীব ওয়াজেদ জয়ের অনুসারী হিসাবে পরিচিত একটি গ্র“পকেও সব সময় লাইম লাইটে রাখা হতো। এর মধ্যে দিয়ে মূলত সব পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে এ বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে তিনিই (জয়) দলের হাল ধরবেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, উত্তরাধিকারের রাজনীতিতে দলের নেতাকর্মীদের কাছে শেখ পরিবারে মূলত দুটি ধারা ছিল গ্রহণযোগ্য। শেখ হাসিনার পরে দলের নেতৃত্বে শেখ রেহানা বা তার ছেলে রাদওয়ান সিদ্দিক ববি আসবেন নাকি শেখ হাসিনার ছেলে জয় বা পুতুল আসবেন-এ নিয়েই ছিল মূল আলোচনা। শেখ হাসিনা চাইতেন জয়ই এই দায়িত্বে আসুক। ফলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও তিনি সব সময় জয়কেই সামনে রাখার চেষ্টা করতেন। এমনকি ৫ আগস্ট পতনের পরও শেখ পরিবার থেকে একমাত্র জয়ই সামাজিক ও গণমাধ্যমে সরব ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ কী করবে, কী করবে না, সে বিষয়ে কথা বলতেন। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মোটামুটি ধরে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনার অবর্তমানে সামনের দিনে সজীব ওয়াজেদ জয়ই দলের নেতা হচ্ছেন।
কিন্তু সম্প্রতি সজীব ওয়াজেদ জয়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা আরও হতাশ ও দিগ্ভ্রান্ত হয়েছেন। দলটির অনেক নেতাকর্মীই বলছেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর সারা দেশে দলের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছেন। হামলা, মামলা ও গ্রেফতার হচ্ছেন। দলের নেত্রী ও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারাও কেউ নেই। দলের এমন দুঃসময়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের উচিত ছিল সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া। কিন্তু তিনি নিজেই আরেক দেশের নাগরিত্ব নিলেন। এর মধ্য দিয়ে মূলত আওয়ামী লীগের নৌকা পুরোপুরি ডুবে গেল।
জানা গেছে, শনিবার ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস সিটিজেনশিপ সেন্টারে আয়োজিত এক নাগরিকত্ব শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। শপথ অনুষ্ঠান শেষে তাকে নাগরিকত্ব সনদপত্র প্রদান করা হয়। এর পরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। ওই শপথ অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ২২ ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। এদের মধ্যে তিনজন ছিলেন বাংলাদেশি, যাদের একজন জয়। বাংলাদেশের নাম ঘোষণা হওয়ার পর দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে তিনি শপথ পাঠ করেন। শপথ অনুষ্ঠানে তিনি একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে অংশগ্রহণ করেন।
২০১৮ সালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জয় জানিয়েছিলেন, তার কোনো বিদেশি পাসপোর্ট নেই এবং তিনি এখনো বাংলাদেশি সবুজ পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। সে সময় তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার স্থায়ী বসবাসের অনুমতি থাকলেও বাংলাদেশি নাগরিকত্বই তার পরিচয়।