
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জয় চীনের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জয় চীনের
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনজুড়ে চলছে বিজয়ের উচ্ছ্বাস। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে ৯০ দিনের জন্য সাময়িক বিরতির সিদ্ধান্তকে ‘জাতীয় সাফল্য’ হিসেবে দেখা হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প একে তার প্রশাসনের ‘কামিকাজে’ কৌশলের সফলতা বলে দাবি করেছেন। কিন্তু চীনের দৃষ্টিকোণ একেবারেই ভিন্ন—তাদের মতে, মার্কিন বাজারে পতন এবং ভোক্তাদের ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই নতি স্বীকার করেছে।চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম শিনহুয়া একটু সংযতভাবে বলেছে, ভবিষ্যতের পথ দু’পক্ষকেই মেধা ও সাহস দিয়ে গড়তে হবে। তবে জাতীয়তাবাদী বিশ্লেষক হু শিজিন সরাসরিই বলেছেন, এটি একটি মহান বিজয়।চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১২৫ শতাংশ ‘পারস্পরিক’ শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, অন্তত ৯০ দিনের জন্য। যদিও ফেন্টানাইল পাচারে চীনের ভূমিকার জন্য আরোপিত ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বহাল থাকবে, তবে তার ‘নির্দিষ্টতা’ ইঙ্গিত দেয় যে, তা আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হতে পারে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ৮০০ ডলারের কম মূল্যের ই-কমার্স প্যাকেটের ওপর থাকা ১২০ শতাংশ শুল্কও অর্ধেকে নামিয়েছে।
বিনিময়ে চীন কী দিলো?
চীন দিয়েছে তুলনামূলকভাবে কম। তারা মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়েছে—ফেন্টানাইল বিষয়ক শুল্ক বাদ দিলে যা যুক্তরাষ্ট্রের হারের সঙ্গে সমান। চীন বোয়িং প্লেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, যা তাদের নিজেদেরই প্রয়োজন। বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর সীমাবদ্ধতাও কিছুটা শিথিল হতে পারে।
চুক্তির ফলে আংশিকভাবে বাণিজ্য ফের শুরু হবে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘস্থায়ী লড়াই সহ্য করতে পারে না। উইচ্যাটে মার্কিন দূতাবাসের ঘোষণার নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘সাম্রাজ্যবাদীরা কাগুজে বাঘ মাত্র।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘যখন মার্কিন সুপারমার্কেটে জিনিসপত্র ফুরিয়ে যায়, তখন তারা আর নিতে পারে না।’
প্রশংসিত চীনের অবস্থান
বিশ্বের দক্ষিণাংশে (গ্লোবাল সাউথ) চীনের এই অবস্থান কূটনৈতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। শেনঝেনের চাইনিজ ইউনিভার্সিটির ঝেং ইয়ংনিয়ান বলেছেন, কারও তো দাঁড়াতে হবে এবং বলতে হবে, আধিপত্যবাদ অনুচিত।
গত ১৩ মে লাতিন আমেরিকার নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বলেন, চীনকে সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাকে এগিয়ে নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক ন্যায় ও ন্যায্যতাকে সমুন্নত রাখতে হবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও চীনের কাছে পৌঁছেছে—যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কিংবা তাইওয়ান ইস্যুতে সামরিক সংঘাতে জড়াতে যতটা আগ্রহী বলে মনে করা হয়, বাস্তবে তা অনেক কম। ট্রাম্প যদিও বলেছিলেন, ‘এটি ঐক্য এবং শান্তির জন্য দারুণ হবে।’ পরে মার্কিন সরকার স্পষ্ট করে জানায়, তিনি মূলভূমি চীন ও তাইওয়ানের পুনর্মিলন বোঝাননি।
রয়েছে উদ্বেগও
বাণিজ্যযুদ্ধ স্থগিত হলেও কিছুটা উদ্বেগ রয়ে গেছে চীনের জন্যও। প্রথমত, চুক্তি এতটাই চীনের পক্ষে গেছে যে, ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন। এপ্রিলের ২ তারিখে ট্রাম্প যেভাবে ‘মুক্তির দিন’ ঘোষণা করেছিলেন, তাতে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ছয় সপ্তাহ পর ট্রাম্প সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। ফলে তিনি হয়তো আবার মত বদলাতে পারেন।
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ৯০ দিনের এই সময়কালে জাহাজগুলো দ্রুত পণ্য সরবরাহ করছে, যা এই অনিশ্চয়তারই ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্পের নতুন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখানো সহজ, কিন্তু স্থায়ী চুক্তি করা কঠিন।