
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | পরিবেশ ও জলবায়ু | শিরোনাম » গাজায় নারীদের জন্য ‘মায়াকান্না’ করছে নেতানিয়াহু
গাজায় নারীদের জন্য ‘মায়াকান্না’ করছে নেতানিয়াহু
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় নারীদের অধিকার নিয়ে ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় থাকা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি ফুল সেন্ড পডকাস্টে হাজির হয়ে এ উদ্বেগ জানান তিনি।
গাজা ও এর বাসিন্দাদের ধ্বংসে যিনি বদ্ধপরিকর, তাঁর মুখে এমন ‘সহানুভূতির’ কথা শুনে বিস্মিত অনেকে।
নেতানিয়াহু তাঁর মায়াকান্নায় বলেন, ‘গাজার নারীরা সম্পত্তি, তাঁদের কোনো মূল্য নেই, তাঁদের কোনো অধিকার নেই, তাঁরা পুরোপুরি দমন-পীড়নের শিকার। ঈশ্বর না করুন, তাঁরা যদি কথিত কোনো অপরাধ করে বসেন, তবে তাঁদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। এটি একেবারেই অযৌক্তিক।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘(গাজার) তরুণ-তরুণীরা প্রগতিশীল মূল্যবোধের নামে হামাসকে সমর্থন করছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন না, কী ভালো, আর কী মন্দ।’ তিনি বাইবেলের উদ্ধৃতি টেনে বলেন, ‘তাঁদের কি চোখ নেই দেখতে, কান নেই শুনতে?’নেতানিয়াহু যাঁদের মুক্তির কথা বলে আবেগে গলা চড়াচ্ছেন, সেই ফিলিস্তিনি নারীদেরই মৌলিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ছিনিয়ে নিচ্ছে। নির্বিচার বোমা হামলা ও দমনমূলক নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সেই ইসরায়েল সরকারেরই প্রধান তিনি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এ সংখ্যাও রক্ষণশীল একটি হিসাব। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার মতে, নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এ সংখ্যাও রক্ষণশীল একটি হিসাব। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার মতে, নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, গাজায় প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শুধু রাফা অঞ্চল থেকেই ১৮ হাজার ৫০০ জনকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য এমন এক সময়ে এল, যখন গাজার ক্ষুধার্ত নারী–পুরুষ ও শিশুরা ইসরায়েলের টানা অবরোধের মধ্যে অবর্ণনীয় দুরবস্থায় দিনাতিপাত করছে। জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো এ উপত্যকায় ওষুধ, সুপেয় পানি ও খাদ্য সরবরাহ করতে পারছে না।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুই-তৃতীয়াংশ কার্যত অচল। ৬৮৬টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ইসরায়েলি হামলার তথ্য তারা নথিভুক্ত করেছে। মাত্র আটটি হাসপাতাল আংশিক মাতৃত্বসেবা দিতে পারছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রায় নেই বললেই চলে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ
নেতানিয়াহুর এ বক্তব্য পডকাস্টে প্রচারিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
গাজার নারীরা সম্পত্তি, তাঁদের কোনো মূল্য নেই, তাঁদের কোনো অধিকার নেই, তাঁরা পুরোপুরি দমন-পীড়নের শিকার। ঈশ্বর না করুন, তাঁরা যদি কথিত কোনো অপরাধ করে বসেন, তবে তাঁদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। এটি একেবারেই অযৌক্তিক।
—বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী
একজন লিখেছেন, ‘ওদের মুক্তি দিচ্ছি বলে বোমা মারছি—কী ভণ্ডামি!’ আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘গাজার নারীরা শিক্ষিত, চিকিৎসক, নার্স, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিল্পী, শিক্ষক এবং একই সঙ্গে মা, বোন, স্ত্রী। তাঁরা সবচেয়ে শক্তিশালী নারী। শুধু হিজাব বা পর্দা করার কারণে তাঁদের অবদমিত হিসেবে চিত্রায়ণ করা ভয়ংকর অপমানজনক।’
আরও একজন লিখেছেন, ‘নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সময় আপনি তাঁদের ঘরবাড়িতে বোমা ফেলছেন, সন্তানদের না খাইয়ে মারছেন, চিকিৎসাসেবা ও নিরাপত্তার সুযোগ কেড়ে নিচ্ছেন। দখলদারি নারীবাদ চলে না। নারীদের মেরে মুক্তি দেওয়া যায় না।’নেতানিয়াহুর এ বক্তব্যকে শুধু ভণ্ডামি নয়; বরং ইতিহাস বিকৃতিরও প্রয়াস বলে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, ফিলিস্তিনি নারীরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও প্রতিরোধ সংগ্রামের অগ্রভাগে আছেন। তাঁদের শুধু ‘ভুক্তভোগী’ হিসেবে তুলে ধরা (নেতানিয়াহুর বক্তব্যে) তাঁদের পরিচয়কেই সংকুচিত করে, বাস্তবতাকে আড়াল করে।
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘হামাস যাঁদের দমন করে রেখেছে, তাঁদের কেন হামাসের সমর্থক হিসেবে দেখা যাচ্ছে? তাঁদের আটক করে রাখা হয়েছে কেন? তাঁদের তো চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত, স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, বাঁচার ও ভবিষ্যতের সুযোগ দেওয়া উচিত।’