রবিবার, ২০ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | বিশেষ প্রতিবেদন | রাজনীতি | শিরোনাম » শেখ হাসিনার ‘পক্ষে’ ওয়াশিংটনকে ভারতের বার্তা, রাজনীতিতে নতুন মোড়
শেখ হাসিনার ‘পক্ষে’ ওয়াশিংটনকে ভারতের বার্তা, রাজনীতিতে নতুন মোড়
বিবিসি২৪নিউজ,বিশেষ প্রতিবেদক ঢাকা: বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত-আমেরিকা কারও পক্ষেই সুখকর হবে না বলে মনে করে ভারত। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার বর্তমান ভূমিকায় ভারত যে খুশি নয়, ওয়াশিংটনকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সেই বার্তাও।
ভারতের গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনা শুরু হয়। বিষয়টি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। যা ফুটে উঠেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে।
এর আগে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকার হুমকিস্বরুপ ‘ভিসানীতি’ আলোচনায় উঠে আসে। এ নিয়ে বিএনপি দৃশ্যত খুশি হলেও তারা শঙ্কায় ছিল। তখন আওয়ামী লীগ নেতারাও ‘ভিসানীতি’তে কার কী সুবিধা-অসুবিধা হবে সে বিষয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। তবে এতদিনে ‘ভিসানীতি’ আলোচনা কিছুটা আড়ালে পড়ে যায়।
এরপর শুরু হয় বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে রাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ চায় এমনটি দাবি করেছেন ১৪ দলের নেতারা। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। যদিও মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশের কোনো ভূখণ্ডের ওপর দাবি করেনি তারা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। এদিকে বিএনপি বলছে, সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোটের বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।
তবে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে রাজনীতির মাঠে সরব হয়ে উঠে বিএনপি। রাজপথের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে কূটনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে মার্কিন দূতাবাস, কংগ্রেসম্যান, ইইউসহ বিদেশিদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে দলটি। বেশ কয়েকবার মির্জা ফখরুল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার এখন দিশেহারা, তারা চাপে রয়েছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ঘনিষ্ঠ বিদেশিরাও আওয়ামী লীগকে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগাদা দেয়। যদিও চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান বরাবরই বলে যাচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে তারা মাথা ঘামাবে না।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোতে বলেছিলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটা দেশটির আইনেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। কাজেই বাংলাদেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনীতিবিদদের তৎপরতাকে নব্য উপনিবেশবাদ ছাড়া কী বলা যেতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে চীনের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে এক সাক্ষাৎ শেষে তিনি জানান, চীন কখনো অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রদূতেরা যেকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং রাজনীতির বিষয়ে যথেষ্ট কৌতূহলী থাকেন। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকব।’
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকরা সরব থাকলেও অনেকটাই চুপ ছিলো প্রতিবেশী দেশ ভারত। সেই নীরবতা ভেঙে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বলেছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হবে সেটি দেশটির জনগণই ঠিক করবে। একইসঙ্গে ‘শান্তি থাকবে, সহিংসতা থাকবে না এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এমনটিই আশা করে ভারত।
এরপরই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে দিল্লি যান আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। ভারত সফর শেষে প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের কোনো আগ্রহ নেই।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ সরকার। এখানে ভারতের কিছু করার নেই। ভারত নির্বাচনে কী করবে? তাদের কিছু করার নেই। তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
এরপরের সপ্তাহে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসভবনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য এড কেইস ও রিচার্ড ম্যাকরমিক। সেসময় তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে এমন একটি নির্বাচন দেখতে চায় যাতে সারা বিশ্ব বলতে পারে দেশে একটি নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের মতে, তাদের আন্দোলন, দৌড়ঝাঁপ সবই ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই দেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় নেয় শেখ হাসিনার ‘পক্ষ’ নিয়ে আমেরিকাকে দেওয়া ভারতের বিশেষ বার্তার পর।
বাংলাদেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের’ পক্ষে আমেরিকা আওয়ামী লীগের ওপর যে চাপ তৈরি করেছে তাতে ভারত এতদিন দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। তবে ভারতের এ বার্তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মোটামুটি সন্তুষ্ট। দলটির সাধারণ ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারতের বার্তা দেওয়াকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নয় বলে দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক রাজনীতির বিষয়ে এই ভূখণ্ডে ভারত ও আমেরিকার অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। তাই ভারত আমেরিকাকে কিছু বললে তারা তাদের স্বার্থে বলেছে। বক্তব্যে সেটি ফুটেও উঠেছে।’
এসময় কাদের মন্তব্য করেন, বিএনপির নেতাদের হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে পড়েছে।
নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার তৎপরতায় বিএনপি খুশিই ছিল। কিন্তু ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপির তরফ থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টিকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের মতো একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত, যদি সংবাদ সত্য হয়ে থাকে। আমরা আশা করবো বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দেবে ভারত।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার তৎপরতাকে এতদিন ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ মনে করেনি বিএনপি। কিন্তু ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভিন্নভাবে দেখছে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ কথা আমরা কখনো বলতাম না, বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা এই মন্তব্য করছে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে- সাউথ ব্লক মনে করে, জামাতে ইসলামীকে ‘রাজনৈতিক ছাড়’ দেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা মৌলবাদের দখলে চলে যাবে। উদার পরিবেশ যেটুকু রয়েছে, তা-ও আর থাকবে না। জামায়াতে ইসলামীকে ভারত ‘মৌলবাদী শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।




বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পাল্টা তলব
মেয়েকে নিয়ে কিম জং উন-এর বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ, ভেতরে ঢোকার চেষ্টা
জটিল সংকটে ঢাকা–দিল্লি সম্পর্ক
ভারতের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি তলব
পাকিস্তান মক্কা ও মদিনার রক্ষক হওয়ার সম্মান পেয়েছে : ফিল্ড মার্শাল মুনির
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ, বিভ্রান্তিকর প্রচারণা : মুখপাত্র
দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে হুমকি
বাংলাদেশের বিষয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ভারত: দিল্লিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস
আগেভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে ‘টানাপোড়েন আছে’: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা 