
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | ইউরোপ | শিরোনাম | সাবলিড » জার্মান সেনাবাহিনীতে কট্টরপন্থার হুমকি
জার্মান সেনাবাহিনীতে কট্টরপন্থার হুমকি
বিবিসি২৪নিউজ,ইইউ প্রতিনিধি: জার্মানির সামরিক বাহিনীতে কট্টর মনোভাব পোষণকারী সদস্যের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার কথা বলছেন বিশ্লেষকেরা৷
জার্মান সমারিক বাহিনীর গবেষণা প্রতিষ্ঠান বুন্ডেসভেয়ার সেন্টার অব মিলিটারি হিস্টোরি অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস বলছে, শতকরা এক ভাগের কম সদস্য কট্টর ডানপন্থি মনোভাব পোষণ করেন৷ গবেষণায় দেখা গেছে, সামরিক বাহিনীতে কর্মরতদের শূন্য দশমিক ৪ ভাগ সদস্য কট্টর ডানপন্থি মনোভাব পোষণ করেন৷ তাছাড়া সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত বেসামরিক ব্যক্তিদের শূন্য দশমিক আট ভাগ সদস্য এমন মনোভাব পোষণ করেন৷ অবশ্য এই সংখ্যা সাধারণ জার্মানদের তুলনায় অনেক কম৷ সাধারণ জার্মানদের পাঁচ দশমিক চার ভাগ মানুষ তাদের মনে এমন মনোভাব লালন করেন৷
তাছাড়া গবেষণায় আরো কিছু বিষয় বেরিয়ে এসেছে, যা উদ্বেগেজনক৷ যেমন, সদস্যদের ছয় দশমিক চার ভাগ উগ্র স্বদেশপ্রেম লালন করেন আর তিন দশমিক পাঁচ ভাগের মধ্যে বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ লক্ষ্য করা গিয়েছে৷
বুন্ডেসভেয়ার সেন্টার অব মিলিটারি হিস্টোরি অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস ২০২২ সালে এই গবেষণাটি পরিচালনা করে৷ গবেষণায় মোট চার হাজার ৩০০ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় এবং ১৮টি ছোট গ্রুপে আলোচনার আয়োজন করা হয়৷
অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সামরিকবাহিনীর সদস্যরা ডানপন্থি আচরণের উতিহাস বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, নতুন এই গবেষণার ফলাফল অনেকটাই ইতিবাচক৷
যেমন ২০২২ সালে ফ্রাংকো এ. নামে এক লেফটেনেন্ট দোষী সাব্যস্ত হন৷ সিরীয় শরণার্থীর ছদ্মবেশে তিনি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি এমন এক কাজ করার পরিকল্পনা করছিলেন৷ তার আগে ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কিছু সদস্য অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছিলেন৷ জার্মানির কোনো কোনো সংবাদমাদ্যম ‘ছায়া সেনাবাহিনী নামে’ সেনাবাহিনীর ভেতরে একটি গোষ্ঠীর কথা বার বার বলছিল, তবে গোয়েন্দা সংস্থা তা বিবেচনায় নেয়নি৷
উল্লেখ্য, জার্মান সামরিক বাহিনীর বর্তমান সদস্য সংখ্যা দুই লাখ ৬০ হাজার৷ এর মধ্যে এক লাখ ৮০ হাজার সেনাসদস্য এবং ৮০ হাজার বেসামরিক সদস্য রয়েছেন৷
ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক?
জরিপের এই ফলাফলকে ইতিবাচক হিসেবে দেথছেন গবেষণা দলের সদস্য মার্কুস স্টেইনব্রেশার৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ আমি বলবো, এই ফলাফলে এক ধরনের স্বস্তি রয়েছে৷’’ যদিও তিনি জানান, এই ফলাফলের মানে হলো, সেনাবাহিনীতে একটি গোষ্ঠী উগ্রবাদী মনোভাব পোষণ করেন৷
তার আগে ২০২৩ সালে এমনই এক জরিপ করেছিল জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থা৷ সেই জরিপে মোট এক হাজার ৪৯টি সন্দেহভাজন উগ্রবাদী ঘটনার তদদন্ত করে সংস্থাটি৷ তার মধ্যে ছিল ৭৭৬টি উগ্র ডানপন্থি ঘটনা, ২২টি বামপন্থি এবং ৫১টি ইসলামিস্ট মনোভাবের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনা৷
তবে সম্প্রতি প্রকাশিত এই গবেষণার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক৷ ডুসেলডর্ফ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের কট্টর ডানপন্থা বিষয়ক গবেষক আংকে হোফস্টাডট মনে করেন, অ্যাকাডেমিক দিক থেকে গবেষণাটি ভালো হলেও সামরিক বাহিনীর নিজেদের একটি দপ্তর থেকে এটি করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, তারা একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান এবং তারা গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছে৷ কিন্তু বিষয় হলো, যাদেরকে নিয়ে গবেষণা করছে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানটি এর ভেতেরই অবস্থান করছে৷
এদিকে যে সময়ে গবেষণাটি করা হয়েছিল, সেই সময়ে অর্থাৎ, ২০২২ সালে সামরিক বাহিনীতে কট্টরপন্থার বিস্তার ঠেকাতে যাচাইবাছাই চলছিল৷ এই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গবেষণার সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ বলেন, উত্তরদানকারীরা গবেষণার সময়ে প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারে৷
কর্তৃপক্ষ কি যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে?
শুধুমাত্র দেশের সার্বভোমত্বের ওবং সংবিধান রক্ষার জন্যই নয়, গণতান্ত্রিক অধিকারের সুরক্ষার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করাও জার্মান সামরিক বাহিনীর আইনি দায়িত্ব৷ যেমন, কেউ উগ্রপন্থা প্রদর্শন করলে তার বিরোধিতা করা সামরিকবাহিনীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে যেই সময়ে জার্মান সমাজে কট্টরপন্থা ক্রমশই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে, ঠিক সেই সময়ে সামরিক বাহিনীতে কট্টরমনোভাব দূর করতে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন হোফস্টাডট৷
তিনি বলেন, ‘‘এমন মনোভাব ঠেকিয়ে রাখতে সেনাবাহিনীতে অনেক চেষ্টা রয়েছে৷ তাদের অনেক সেমিনার হচ্ছে, মিটিং হচ্ছে এবং রাজনৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা রযেছে৷ কিন্তু মূলে গিয়ে দেখা যায়, আধুনিক ডানপন্থি মনোভাবের বিষয়ে খুব বেশি সচেতনতা নেই৷’’
অবশ্য গবেষক স্টেইনব্রেশার অনেক আশাবাদী৷ তার মতে, জার্মান সামরিক বাহিনী কট্টর ডানপন্থা রুখতে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, এটি এখন গুরুত্ব পাচ্ছে৷ আমি ন্যাটোর দেশগুলোর একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা দলেও যুক্ত রয়েছি এবং নিরপেক্ষভাবে আমি বলতে পারি যে, কট্টরপন্থা রুখতে জার্মান সামরিক বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা রাখছে৷’’
তবে এই বিষয়ে সতর্কবার্তাও দেন তিনি৷ তার মতে, সামরিক বাহিনীতে জনবল বাড়াতে বদ্ধপরিকর সরকার৷ সরকার সামরিকবাহিনীর কিছু খাতও বাড়াতে চায়৷ এমন পরিস্থিতিতে কট্টরপন্থার মতো বিষয় যাচাই-বাছাই করা কঠিন হয়ে উঠকে পারে৷
আর গবেষক হোফসআডের মনে করেন, ‘‘আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না৷ আমরা বলতে পারি, ওহ হ্যাঁ, শতকরা একভাগেরও কম, সব ঠিকই আছে ৷’’
‘‘কিন্তু এটি হিমশৈলের চূড়ার মতো হতে পারে৷ আমাদেরকে পুরো অংশটুকু নিয়েই কথা বলতে হবে,’’ বলেন তিনি৷