
বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | রাজনীতি | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশে রাজনীতিতে হঠাৎ ছায়াযুদ্ধে’ বিএনপি ও এনসিপি
বাংলাদেশে রাজনীতিতে হঠাৎ ছায়াযুদ্ধে’ বিএনপি ও এনসিপি
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: বিএনপি ও এনসিপির পৃথক কর্মসূচি হঠাৎ করেই রাজনীতিতে বেশ উত্তাপ তৈরি করেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র করার দাবি সামনে রেখে। এরপর এনসিপি কর্মসূচি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে। দল দুটির দাবি ভিন্ন ভিন্ন হলেও এটাকে কার্যত পাল্টাপাল্টি বা ছায়াযুদ্ধ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপি ইশরাকের ইস্যুতে জয়ী হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি ধাক্কা দিতে চায়—যার চূড়ান্ত লক্ষ্য দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আদায় করা। পাশাপাশি এনসিপির ওপরও একটা রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে চায়। কারণ, বিএনপির নেতারা মনে করেন, এনসিপি একের পর এক ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন পেছাতে চায়।অপর দিকে ইশরাক ইস্যুতে আন্দোলনে বিস্তৃতি বাড়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) পাল্টা চাপ তৈরির লক্ষ্যে কর্মসূচি নিয়েছে। তারা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তোলে। পরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে।
ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিকে ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে টানা কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপি মৌলিক সংস্কার পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চায়। তারা ইশরাক হোসেনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দ্রুত নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর পরোক্ষ চাপ তৈরি করতে চাইছে। এর পাল্টা বিএনপির ওপর পরোক্ষ চাপ তৈরি করতে ইসির সামনে বিক্ষোভ করে এনসিপি।দুই পক্ষের এই ছায়াযুদ্ধ ও পাল্টাপাল্টি বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাউকে কাউকে টেনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার জন্য বিএনপির নেতারা সরকারকে দায়ী করছেন। গতকাল বুধবার সকালে নির্বাচন ভবনের সামনে এনসিপির কর্মসূচির কয়েক ঘণ্টা আগে ইশরাক হোসেন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (স্থানীয় সরকার) ও মাহফুজ আলমের (তথ্য ও সম্প্রচার) পদত্যাগ দাবি করেন। দুপুরে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি ইসির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতায় সরকারের তিনজন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আসিফ নজরুলকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ দাবি করে হুঁশিয়ারি জানান, সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়িত না হলে তাঁদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্রদল দুই দফা শাহবাগ অবরোধ করে। তারা উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিও তুলেছিল। শুরুতে এটাকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যকে সরানোর পাল্টা হিসেবে মনে করেছিল রাজনৈতিক সচেতন মহলগুলো।কারণ, কুয়েটের ওই উপাচার্য বিএনপিপন্থী শিক্ষক ছিলেন। কুয়েটে ওই আন্দোলনে ছাত্রদল বা বিএনপির পরাজয় হয়েছে বলে জনপরিসরে ধারণা তৈরি হয়েছিল। তবে ঢাকায় ছাত্রদল নেতার হত্যার প্রতিবাদ ও ইশরাক ইস্যুতে আন্দোলনে পর্যায়ক্রমে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের অংশগ্রহণ জোরদার হওয়া এবং এনসিপির পাল্টা সোচ্চার হওয়ায় নতুন করে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এনসিপির শীর্ষ ও মধ্যম সারির অন্তত পাঁচজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ইশরাকের বিষয়টিকে অজুহাত করে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শিক্ষার্থীদের দুই প্রতিনিধিকে (আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম) সরাতে চাইছে। এর প্রতিক্রিয়ায় এনসিপিও অন্য তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপিপন্থী’ আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।এনসিপির নেতাদের অনেকে মনে করেন, ইশরাকের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ তৈরি করতে চাইছে। আর নির্বাচন কমিশন ইশরাকের মামলায় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করে ‘তড়িঘড়ি’ গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যত বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।
অন্যদিকে ইশরাকের সমর্থকেরা মনে করেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কারণেই ইশরাকের মেয়র পদে শপথের বিষয়টি আটকে আছে। এ জন্য আন্দোলনে আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে স্লোগানসহ নানাভাবে ক্ষোভ দেখানো হচ্ছে।
তবে শুরুতে ইশরাক সমর্থকেরা মাঠে নামলেও পরে বিএনপির নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে সমর্থন করে, যার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল বুধবার। এদিন ইশরাকের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা, এমনকি ঢাকার আশপাশের জেলার দলীয় নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ দেখা গেছে।
এমন পরিস্থিতির একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় গত সোমবার সিলেটে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তৃতায়। তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বান করছি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে, আজকে-কালকের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আদালত ঘোষিত ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় ঢাকায় এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হয়তো আরও বৃহত্তর আন্দোলন করতে হতে পারে।’১৭ মে নগর ভবনের সব ফটকে ইশরাক সমর্থকেরা তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর টানা আন্দোলন করে আসছেন। এনসিপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর প্রতিক্রিয়া হিসেবেই তাঁরা ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার দাবি সামনে আনেন।
যদিও বিএনপির নেতাদের সন্দেহ, সরকারের ভেতরে-বাইরে একাধিক গোষ্ঠী জাতীয় নির্বাচন পেছাতে চায়। এনসিপিও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বলে তাঁদের ধারণা। তাই ইশরাক ইস্যুতে বিএনপি একই সঙ্গে সরকার ও এনসিপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে।
এই পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজনীতিবিষয়ক লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগও একটা পাল্টা কর্মসূচি দিত। এখনকার ব্যাপারটা দেখে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির যে ঝগড়াটা ছিল, সেটা এখন এনসিপি আর বিএনপির মধ্যে চলে এসেছে। উভয় দলই মাঠে সক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এতে যে জনভোগান্তি হচ্ছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো মাথাব্যথা নেই।