
বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | শিরোনাম | সাবলিড » শি জিনপিং ও ট্রাম্পের ফোনালাপ, বিশ্ব অর্থনীতিতে গতি আসবে?
শি জিনপিং ও ট্রাম্পের ফোনালাপ, বিশ্ব অর্থনীতিতে গতি আসবে?
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টেলিফোনে কথা বলেছেন। চীনের ওয়াশিংটন দূতাবাস জানিয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থির করে তোলা শুল্ক নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার এ ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অনুরোধেই এ আলোচনা হয়েছে। তবে এর বেশি বিস্তারিত তথ্য জানায়নি তারা। হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপ এমন একসময়ে হলো যখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দুটির দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গত মে মাসে, জেনেভায় দীর্ঘ আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের পণ্যের ওপর থেকে সাময়িকভাবে শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী, ৯০ দিনের আলোচনা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করবে। অন্যদিকে চীনও তাদের পাল্টা শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করবে। তবে গত ৩০ মে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, চীন দুই সপ্তাহ আগের শুল্ক কমানোর চুক্তিটি লঙ্ঘন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে এ ফোনালাপ বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধে নতুন আশার সঞ্চার করবে বলছেন বিনিয়োগকারীরা।
Advertisement
জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ট্রাম্প। এর পর থেকেই দুই দেশ একে অপরের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আসছিল। গত ১২ মে উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য একটি অস্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছায়, যেখানে কিছু শুল্ক কমানোর কথা বলা হয়েছিল। এই চুক্তি সাময়িক স্বস্তি দিলেও, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যান্য বড় সমস্যা, যেমন—অবৈধ ফেন্টানিল বাণিজ্য, তাইওয়ানের মর্যাদা ও চীনের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত, রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি মডেল নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছেন। যদিও শেষ মুহূর্তে কিছু সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন, তবে তার এ অনিশ্চিত মনোভাব বিশ্বের নেতাদের ও ব্যবসায়ীদের বিভ্রান্ত করেছে। কারণ তার হুটহাট সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্ববাজারের পূর্বাভাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে এপ্রিল মাস থেকে চীন হঠাৎ করেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও চুম্বক রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গাড়ি নির্মাতা, কম্পিউটার চিপ প্রস্তুতকারক ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বেইজিং খনিজ রপ্তানিকে একটি চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে দেখছে। যদি এই রপ্তানি বন্ধের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায়, তাহলে ট্রাম্পের ওপর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ বাড়তে পারে।
৯০ দিনের শুল্ক কমানোর চুক্তিটি এখন নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন এবং চিফ ডিজাইন সফটওয়্যার ও অন্যান্য চীনা পণ্যের চালান নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্কও ৫০ শতাংশে বাড়িয়েছেন। বেইজিং অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে তাদের প্রধান ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ট্রাম্প বারবার বাণিজ্য হুমকি ও শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও মাঝে মধ্যেই সেগুলো শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করেছেন, যা বৈশ্বিক নেতাদের বিভ্রান্ত করেছে এবং ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
তবে এসব উত্তেজনার মধ্যেও ট্রাম্প শি চিনপিংয়ের প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি একজন ‘দৃঢ়’ নেতা এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সক্ষমতা তার আছে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ক্ষেত্রে নেই।
চীন বরাবরই বলে এসেছে, দুই নেতার মধ্যে সরাসরি আলোচনার আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি প্রয়োজন। অন্যদিকে ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টারা মনে করেন, উচ্চপর্যায়ের এমন কথোপকথনই কেবল কঠিন আলোচনায় অচলাবস্থা কাটাতে পারে।
দুই নেতার সর্বশেষ সরাসরি যোগাযোগ কবে হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। সর্বশেষ, ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে। এরপর ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন। তখন সামরিক যোগাযোগ পুনরায় চালু করা ও ফেন্টানিল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে একমত হয় দুই দেশ।