
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা - এলাকায় পৌঁছায়নি ত্রাণ, বানভাসীদের কান্না
বাংলাদেশের কয়েকটি জেলা - এলাকায় পৌঁছায়নি ত্রাণ, বানভাসীদের কান্না
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিনিধি: ফুলগাজী উপজেলার পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া গ্রামের শাহীনা বেগমের ঘর ডুবে গেছে বন্যার পানিতে। সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের একটি দোতলা বাড়ির ছাদে। প্রথম দিন ঘরে যা ছিল, তা দিয়েই কোনোমতে আহার জুটিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে ফেনীর পুলিশ সুপার ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ত্রাণ বিতরণে গেলে শাহীনা একটি খাবারের প্যাকেট পান। কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে পানিবন্দি আছি, কেউ খাবার বা কোনো সাহায্য নিয়ে আসেনি।’’
শাহীনার মতো দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন জয়পুরা ও পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া এলাকার আরও অন্তত দুই শতাধিক পরিবার।
জয়পুরা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবদুল জলিল বলেন, ‘‘ঘরবাড়ি সব পানির নিচে। গবাদিপশু আর বউ-ঝিদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। চারদিক পানি, কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। চেয়ে থাকি কেউ বুঝি ত্রাণ নিয়ে আসবে। কিন্তু কেউ আসেনি।’’
আনন্দপুর গ্রামের তনিমা সুলতানা বলেন, ‘‘আমাদের ঘর রাস্তার পাশে হলেও এখনো একটা মোমবাতি বা কয়েল পর্যন্ত কেউ দেয়নি।’’
পরশুরামের দুর্গাপুর গ্রামের ছেমন আরা বলেন, ‘‘গত বছর বন্যায় যা ছিল সব ভেসে গিয়েছিল। ধারদেনা করে ঘর তুলেছিলাম। এবার আবার পানিতে সব ভেসে গেছে। এখন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে, ফেরার কোনো উপায় নেই।’’
গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের ঢলে ফের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত ২১টি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্রবল স্রোতে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন জনপদ। তলিয়ে গেছে বসতঘর, ফসলি জমি, সড়ক ও দোকানপাট। লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, “বুধবার বিকেলের পর থেকে বৃষ্টি কম থাকায় কিছু এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ঘনিয়ামোড়া, দৌলতপুর, জগতপুর, আমজাদহাট ও জিএমহাট এলাকায় এখনো অন্তত সাত হাজার মানুষ পানিবন্দি।”
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানি নামা শুরু করলেও অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি রয়েছেন। দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, গত চার দিন ধরে ফেনীতে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবারও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি নামলে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে।”
ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “শহরের তুলনায় প্রত্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ। এজন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে হয়েছে। যারা নিজের চোখে দেখেননি, তারা এই দুর্ভোগ অনুধাবন করতে পারবেন না। সবাইকে বানভাসিদের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।”
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার কিছু অংশে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। সেনাবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। ছয় উপজেলায় ত্রাণের জন্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”