শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

BBC24 News
মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু » করোনাভাইরাসে যে ভাবে কেড়ে নিল বাংলাদেশীর জীবন
প্রথম পাতা » পরিবেশ ও জলবায়ু » করোনাভাইরাসে যে ভাবে কেড়ে নিল বাংলাদেশীর জীবন
১৪২৮ বার পঠিত
মঙ্গলবার, ১০ মার্চ ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

করোনাভাইরাসে যে ভাবে কেড়ে নিল বাংলাদেশীর জীবন

---বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ব্রিটেনে গতকাল রোববার যে তৃতীয় ব্যক্তি করোনাভাইরাসে মারা গেছেন, তিনি একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি। সংক্রমণ ধরা পড়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ম্যানচেস্টারের এক হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার ছেলে বিবিসি বাংলার মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে বর্ণনা করেছেন কীভাবে ইটালিতে বেড়াতে গিয়ে তাঁর বাবা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেনঃ”প্রতি বছরের শুরুতে আমার বাবা ইটালিতে বেড়াতে যান দুই-তিন সপ্তাহের জন্য। এটা তার একটা প্রিয় বেড়ানোর জায়গা। কারণ বহু বছর তিনি ইটালিতে ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইটালি আসেন। তখন তিনি বয়সে তরুণ।ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ বাবা ফিরে আসলেন ইটালি থেকে। তখনও তিনি সুস্থ। কিন্তু তিন দিন পর সব যেন ওলট-পালট হয়ে গেল।

মার্চের তিন তারিখ, মঙ্গলবার। সেই মঙ্গলবারটা ছিল আর যে কোন দিনের মতোই। আমাদের বাড়ির কাছে যে হেলথ সেন্টার, বাবা সেখানে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। এই অ্যাপয়েন্টমেন্টটা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।

বাবার বয়স ছিল ৬০ বছর। তার নানা ধরনের অসুস্থতা ছিল, যা নিয়ে তিনি বেশ ভুগছিলেন। কোলেস্টরেল, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট। তবে এসবের পরও তিনি মোটামুটি ভালোই ছিলেন। তিনি একশোভাগ সুস্থ ছিলেন, এটা বলা যাবে না, কিন্তু মোটামুটি ভালো ছিলেন।

করোনাভাইরাস নিয়ে যেহেতু আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল, তাই আমি কিছু মাস্ক কিনেছিলাম। আমি আমার মা-বাবাকে বললাম, বাইরে যাওয়ার সময় যেন তারা মাস্ক পরে বের হন।

গত মঙ্গলবার বাড়ির কাছের হেলথ সেন্টারে যখন বাবা গেলেন, তখন ডাক্তার এবং নার্সরা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তিনি মাস্ক পরে আছেন। তিনি বললেন, মাত্র দুদিন আগে তিনি ইটালি থেকে এসেছেন।সাথে সাথে সেখানে আতংক ছড়িয়ে পড়লো। তাকে আলাদা করে ফেলা হলো। নর্থ ম্যানচেষ্টার জেনারেল হাসপাতাল থেকে একটা জরুরি দল চলে এলো। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।

তার সঙ্গে আমাদের সেদিনই শেষ দেখা। আমরা বুঝতে পারিনি যে আর কোনদিন তার সঙ্গে আর দেখা হবে না।

হাসপাতালে প্রথম কয়েকদিন তিনি বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু তারপর ডাক্তাররা বলছিলেন, তার রক্তে যথেষ্ট অক্সিজেন যাচ্ছে না। তার হার্টবিট অনিয়মিত। এভাবেই চলছিল কয়েকদিন। তারপর রোববার তিনি মারা গেলেন। এদিকে বাড়িতে আমাদেরও রীতিমত আলাদা করে রাখা হয়েছিল। আমরা ঘর থেকে বেরুতে পারছিলাম না। কোথাও যেতে পারছিলাম না। বাবার খবরাখবর আমরা পেতাম টেলিফোনে।

যে ওয়ার্ডে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে আমরা ফোন করতাম। সেখান থেকেই আমরা খবর পেতাম। আমরা তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারতাম না।

গতকাল রোববার সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন এলো আমাদের কাছে। তারা বললো, আধ ঘন্টা আগে বাবা মারা গেছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। খবরটা শুনে ধাতস্থ হতে আমার কয়েক ঘন্টা সময় লেগেছিল। আমার বাবাকে আমি আর কোনদিন দেখতে পাবো না! এরকম একটা খবর যখন আপনি পান, সেটা বুঝতেই আপনার অনেক সময় লেগে যায়। আমি ছিলাম শোকাহত। আমাদের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল।

বাবার মৃত্যুর খবর পেলেও আমরা কিছুই করতে পারছি না, কোথাও যেতে পারছি না। কারণ আমাদের সবাইকে ‘আইসোলেশনে’ রাখা হয়েছে। প্রতিদিন পাবলিক হেলথ ইংল্যাণ্ড থেকে আমাদের সবার কাছে টেক্সট আসে। তারা জানতে চায়, আমাদের সব ঠিক আছে কীনা। আমাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোন লক্ষণ আছে কীনা। প্রতিদিন আমাদের সেই টেক্সটের জবাব দিতে হয়। এখন পর্যন্ত আমরা সবাই ভালো আছি। আমাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ নেই। আমরা এক সপ্তাহ এই অবস্থায় আছি। আরও এক সপ্তাহ থাকতে হবে।

আমরা যেহেতু আইসোলেশনে আছি, তাই আমার বাবার জানাজা বা দাফন কোন কিছুই করতে পারছি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা লাশ আরও কিছুদিন মর্গে রেখে দেবে । আরও এক সপ্তাহ পর যখন আমাদের মুক্তি মিলবে, তখন আমরা বাবার জানাজা, দাফন এগুলোর আয়োজন করতে পারবো।

আমরা এখনো জানি না, তার জানাজা-দাফন এগুলো আমরা স্বাভাবিকভাবে করতে পারবো কিনা। কারণ তিনি তো স্বাভাবিকভাবে মারা যাননি। পাবলিক হেলথ ইংল্যাণ্ড যা বলে, সেই মতই আমাদের কাজ করতে হবে।

মাত্র দু’মাস আগেও আমরা জানতাম না করোনাভাইরাস জিনিসটা কী, এই ভাইরাসটাই ছিল না। এখন এই ভাইরাস আমার বাবাকে কেড়ে নিল।”

উত্তর ইটালির যে শহরে আমরা থাকতাম সেটা মিলান থেকে ৫০ মাইল দূরে। সেখান থেকে সুইটজারল্যাণ্ডের সীমান্তও বেশি দূরে নয়। বহু বছর আমরা সেখানে ছিলাম। আমার জন্ম সেখানেই। বড় হয়েছি সেখানে।

পাঁচ-ছয় বছর আগে আমরা পাকাপাকিভাবে ব্রিটেনে চলে আসি। আমরা থাকি ম্যানচেস্টারের কাছে। কিন্তু আমার বাবা ইটালিতে বেড়াতে যেতে পছন্দ করতেন। আমরাও প্রতি বছর গ্রীস্মে পরিবারের সবাই মিলে সেখানে বেড়াতে যেতাম। তবে বাবা প্রতি বছরের শুরুতে নিয়ম করে বেড়াতে যেতেন ইটালিতে তার পুরোনো শহরে । এবছরও গিয়েছিলেন।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তিনি সেখানে যান। তখনও ইটালিতে করোনাভাইরাস এত ব্যাপকভাবে ছড়ানোর কথা শোনা যায়নি। কিন্তু তিনি যে দুই সপ্তাহ ইটালিতে ছিলেন, তার মধ্যেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়। ব্যাপকভাবে সেখানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।



আর্কাইভ

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করলো তুরস্ক
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশন গৃহীত
সাংবাদিককে হুমকি গ্রহণযোগ্য নয়: মিলার
উপজেলা ভোটে প্রভাব বিস্তার করবেন না, মন্ত্রী-এমপিদের ইসি
কংগ্রেস পাকিস্তানের ‘মুরিদ’: মোদি
নিউইয়র্কের আদালতে ট্রাম্পকে ৯ হাজার ডলার জরিমানা
উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে বিদেশে অপপ্রচার চালানো হয় : আরাফাত
অর্থ পাচারের মামলায় জামিন পেলেন ড. ইউনূস
রাফায় অভিযানের হুঁশিয়ারি ইসরাইলের, সতর্কবার্তা জাতিসংঘের
গ্রেফতার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ নেতানিয়াহু