
শুক্রবার, ৪ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » বায়ুদূষণের ঝুঁকির মুখে নির্মল পরিবেশের বিকল্প নেই
বায়ুদূষণের ঝুঁকির মুখে নির্মল পরিবেশের বিকল্প নেই
বিবিসি২৪নিউজ, সম্পাদকীয়ঃড.আরিফুর রহমানঃ দেশের পরিবেশদূষণের কারণে দেশের টেকসই উন্নয়ন ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকলেও দূষণ রোধে সামগ্রিকভাবে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। অদৃশ্য ঘাতক বায়ুদূষণের বিষয়টি খোলা চোখে দেখা না গেলেও এটি মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হতে পারে।
কাজেই এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। শুধু বায়ুদূষণেই দেশে বছরে জিডিপির ৯ শতাংশ ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ৩২ শতাংশ মৃত্যু পরিবেশদূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ কৃষি জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে জলবায়ু অভিবাসী হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কাক্সিক্ষত উন্নয়ন অর্জনের জন্য অধিকতর সবুজ, সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি মডেলকে গুরুত্ব দিতে হবে।
নানামুখী দূষণের কবলে পড়ে রাজধানী ঢাকা যে বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে, তা বহুদিন ধরেই আলোচিত। সোমবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় বলা হয়েছে, বায়ুদূষণে দেশে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। ২০ বছরে বায়ুদূষণজনিত রোগবালাইয়ের কারণে মৃত্যু ৯ শতাংশ বেড়েছে। ১৫ বছরে প্লাস্টিক দূষণও বেড়েছে দ্বিগুণ। এতে ভয়াবহ স্বাস্থ্যগত ক্ষতির শিকার হচ্ছে শহরাঞ্চলের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে সবুজ শহর গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে সারা দেশে সবুজ পরিবেশ তৈরির উদ্যোগও নিতে হবে।
রাজধানীর বায়ুর মান কতটা অস্বাস্থ্যকর, তা বিভিন্ন সময়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে। রাজধানীর বায়ুমান উন্নয়নে এ শহরের আশপাশের সব ইটভাটা বন্ধের পাশাপাশি রাজধানীতে দূষণ সৃষ্টিকারী যানবাহন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে; কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে তা কার্যকর করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির কারণে রাজধানীতে কালো ধোঁয়া সৃষ্টিকারী যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। কাজেই সর্ষের ভেতরের ভূত তাড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে রাজধানীর বায়ুর মানের উন্নয়ন হবে কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এছাড়া যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী রাখাও বায়ুদূষণের এক বড় কারণ। প্রশ্ন হলো, যারা এসব কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? দূষণ কমাতে ইলেকট্রিক যানবাহনে গুরুত্ব বাড়ানো যায় কি না, তা ভেবে দেখা যেতে পারে।
দেশে পানিদূষণ ও অন্যান্য দূষণের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। পানিদূষণের কারণে মারাত্মক দুষিত পদার্থও আমাদের খাদ্যচক্রে মিশে যাচ্ছে। ফলে মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিছু মানুষের লোভ-লালসার কারণে সৃষ্ট দূষণে জনসাধারণের ভোগান্তি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দূষণ রোধে কাক্সিক্ষত ফল মিলবে না। কেবল প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দূষণ পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি হবে না। দেশের সাধারণ মানুষকেও নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলার কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে।