শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ন ১৪৩২

BBC24 News
শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » নানা পরিচয়ে গৌরবোজ্জ্বল আবুল মাল আবদুল মুহিত, বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান!
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » নানা পরিচয়ে গৌরবোজ্জ্বল আবুল মাল আবদুল মুহিত, বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান!
৮৫৩ বার পঠিত
শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নানা পরিচয়ে গৌরবোজ্জ্বল আবুল মাল আবদুল মুহিত, বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান!

---বিবিসি২৪নিউজ, ড.আরিফুর রহমানঃ আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ এবং মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরী। দু’জনই রাজনীতি ও সমাজসেবায় সক্রিয় ছিলেন। সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী, অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, লেখক, গবেষক, পরিবেশবিদসহ নানা পরিচয়ে গৌরবোজ্জ্বল আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সংস্কৃতিমান পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠা মুহিত কৈশোরেই সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় ছিলেন বেশ মনোযোগী। শিশু-কিশোর সংগঠন ‘মুকুল ফৌজ’ গঠন করে নেমে পড়েন সৃজনশীল চর্চায়। ৮৮ বছর বয়সেও তার সৃজনশীল চর্চা থেমে ছিল না। এ বয়সেও তিনি লিখতেন, ভাবতেন।

দেশের সংকট ও সম্ভাবনা, অর্থনীতি, সমাজনীতি নিয়ে ব্যক্ত করে গিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ মতামত।একজন ভাষা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশের সম্পৃক্ত ও সমৃদ্ধিতে তিনি এক রূপান্তরের নায়ক। ইতিহাস-ঐতিহ্য সচেতন আলোকিত গুণীজন একজন ন্যায়নিষ্ঠ, সজ্জন চিৎপ্রকর্ষবিদ ছিলেন তিনি।

সরলতা, সততা ও সত্য-কথনে এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম আবুল মাল আব্দুল মুহিত।ছাত্র জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। আব্দুল মুহিত ১৯৪৮ সালে স্কুলছাত্র হিসেবে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। এরপর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত হন। ১৯৪৯ সালে সিলেট সরকারি পাইলট হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতকার্য হন।

১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাশ করেন।
চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগ দেওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব নিযুক্ত হন আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তবে এই দায়িত্ব গ্রহণ না করে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে ওয়াশিংটন দূতাবাসে ইকোনোমিক মিনিস্টারের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৪ সালে তিনি এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক পদে নিযুক্ত হন। এ পর্যন্ত তিনি একমাত্র বাংলাদেশি যিনি এ পদে আসীন হয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালে চাকরির ২৫ বছর পূর্তিকালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন।

---আবদুল মুহিত পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপ-সচিব থাকাকালে পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এই বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ -এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেন।

১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদে কাজ শুরু করেন। ১৯৮২-৮৩ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন।

১৯৮৪-৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি সার্বক্ষণিক দেশে অবস্থান করে একজন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনে সম্পৃক্ত হয়ে দেশের সুশীল সমাজের একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন।

---বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনে তিনি একজন পথিকৃৎ। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালের অগাস্টে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর অক্টোবরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালে সিলেট-১ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।

আবদুল মুহিত অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে তিনি নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। ২০১৪ সালে সিলেট-১ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি আবারও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। দক্ষতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে আর নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার ঘোষণায়ও তিনি ব্যতিক্রম। অবসর নিয়েও মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের জাতীয় অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন।একজন আবুল মাল আবদুল মুহিত অফুরন্ত জীবনীশক্তির অধিকারী এক প্রাণবন্ত মানুষ। সদা হাস্যোজ্জ্বল কর্মযোগী এই মানুষটির স্পষ্টতা, সরলতা ও সাহসিকতা সব মহলে প্রশংসিত। লেখক হিসেবেও খ্যাতিমান তিনি। প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার ৩০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিষয়ে তাঁর ‘জেলায় জেলায় সরকার’ একটি আকর গ্রন্থ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মহকুমাগুলোকে জেলায় রূপান্তর এবং গণতান্ত্রিক জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রশাসনিক প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালে তিনি প্রণয়ন করেছিলেন। আবদুল মুহিতের স্ত্রী সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ, বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং কনিষ্ঠ ছেলে সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন।

বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব আবদুল মুহিত বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে অনেকটা ঘরবন্দি ছিলেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হননি। ব্যস্ত ছিলেন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে। বেশিরভাগ সময়ই বই পড়তেন। নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রথাগত রাজনীতির পথে না হেঁটে জাতির বিকাশমান ধারাকে অগ্রবর্তী করেছেন। ঐতিহ্যের পরম্পরা ধারণ করে দলীয় রাজনীতি করেও হয়ে ওঠেছেন সর্বদলীয় অভিভাবক।



এ পাতার আরও খবর

নিরাপত্তা উদ্বেগে বিদেশিরা বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী না, বিকেএমইএ: উপদেষ্টার দ্বিমত নিরাপত্তা উদ্বেগে বিদেশিরা বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী না, বিকেএমইএ: উপদেষ্টার দ্বিমত
শেখ হাসিনার অগ্রণী ব্যাংকে দুটি লকারে ৮৩২ ভরি সোনার গয়না শেখ হাসিনার অগ্রণী ব্যাংকে দুটি লকারে ৮৩২ ভরি সোনার গয়না
বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ: বিশ্বব্যাংক বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ: বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের ৩ টার্মিনাল যাবে বিদেশিদের হাতে বাংলাদেশের ৩ টার্মিনাল যাবে বিদেশিদের হাতে
পৃথিবীতে সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বান পৃথিবীতে সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বান
বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ডব্লিউটিওর সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ডব্লিউটিওর সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প, মোট ৫০ শতাংশ ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প, মোট ৫০ শতাংশ
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘প্যাকেজ প্রস্তাব’ দেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘প্যাকেজ প্রস্তাব’ দেবে বাংলাদেশ
অন্তর্বর্তী সরকারের আর্থিক খাতে পদক্ষেপের প্রশংসা বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তী সরকারের আর্থিক খাতে পদক্ষেপের প্রশংসা বিশ্বব্যাংকের
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্যের বাইরের শর্ত নিয়েই মূল দরকষাকষি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্যের বাইরের শর্ত নিয়েই মূল দরকষাকষি

আর্কাইভ

দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ তফশিল ঘোষণার পর কার্যকর: প্রেস সচিব
মস্কোতে রুশ সামরিক বিমান বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৭
খালেদা জিয়ার জন্য ‘উদ্বিগ্ন’ শেখ হাসিনা
ইতালি থেকে জঙ্গি বিমান কিনতে সম্মতিপত্র সই বাংলাদেশের
ভারতে আবারও শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
বিদেশে নেওয়া হচ্ছে না খালেদা জিয়াকে
দেশের কেউ ম্যান্ডেট দেয়নি যে এত দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে’
জাপানে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সুনামির আঘাত
জুলাই আন্দোলনে নিহত ১৮২ মরদেহ উত্তোলন করা হবে
ভারতেই থাকবেন কি না, সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনাই নেবেন: জয়শঙ্কর