
রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » নেতা-কর্মীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না: বিএনপি
নেতা-কর্মীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না: বিএনপি
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সম্পৃক্ততার ঘটনায় ব্যাপকভাবে চাপে পড়েছে দলটি। এ ঘটনায় জড়িত যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচ নেতা–কর্মীকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলেও বিএনপি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলা, খুন, দখল, অর্থ দাবি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত, দলীয় পদপদবি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এমনিতেই বিব্রত দলটির নেতারা।দুষ্কৃতকারীদের অপরাধের দায় দল নেবে না—বিএনপির নেতারা আগে এ কথা বলে এলেও একশ্রেণির নেতা–কর্মীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দলটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যার কারণে লাল চাঁদ হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপিকে লক্ষ্য করে ক্ষোভ–বিক্ষোভ ও নিন্দা–প্রতিবাদ বাড়ছে।এরই মধ্যে গত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যা করা হয়। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ কয়েকটি বিষয়ে যখন অন্য দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির মতবিরোধ চলছিল; সে সময়ে পুরান ঢাকার এ হত্যাকাণ্ড বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে। এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনের ছাত্র ও যুব সংগঠন রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দল ও সংগঠন।বিএনপি নিজেও এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে। শুক্রবার রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতিতে বলেছেন, জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এই নির্মম ঘটনাটি (লাল চাঁদ হত্যাকাণ্ড) দেশের মানুষের বিবেককে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজকে আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে।
এত বহিষ্কার, অব্যাহতি, পদাবনতি ও কমিটি বাতিল করার মতো কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও কেন নেতা–কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বিএনপি—এ প্রশ্নও সামনে এসেছে।
দুষ্কৃতকারীদের অপরাধের দায় দল নেবে না—বিএনপির নেতারা আগে এ কথা বলে এলেও একশ্রেণির নেতা–কর্মীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দলটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যার কারণে লাল চাঁদ হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপিকে লক্ষ্য করে ক্ষোভ–বিক্ষোভ ও নিন্দা–প্রতিবাদ বাড়ছে। এর আগে ৩ জুলাই আসামি ছিনিয়ে নিতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালান বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। হামলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পুলিশের আটজন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।৭ হাজার নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, তবু থামছে না
এত বহিষ্কার, অব্যাহতি, পদাবনতি ও কমিটি বাতিল করার মতো কঠোর ব্যবস্থা নিয়েও কেন নেতা–কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বিএনপি—এ প্রশ্নও সামনে এসেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, হয়তো অনেক অপরাধী, সন্ত্রাসী নানা ছিদ্রপথে সংগঠনে ঢুকে যেতে পারে। কিন্তু তাদের দুষ্কর্মের দায় তো বিএনপি নেবে না। বরং এ ব্যাপারে দল খড়্গহস্ত। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত জেলা, মহানগর, থানা এবং কেন্দ্র মিলে প্রায় সাত হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিএনপি শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। অপরাধ যে-ই করবে, তাঁকে চরম শাস্তি দিতে দল বদ্ধপরিকর।
বিএনপি তো দায় এড়াচ্ছে না; বরং দায়িত্ব পালন করছে। অভিযোগ পাওয়ামাত্র বহিষ্কার করছে, প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছে। এরপরও বিভিন্ন মহল এটা নিয়ে হীন রাজনীতির চেষ্টা করছে। তা না হলে তারেক রহমান জবাব দাও, এই মিছিল কেন। তারেক রহমান কি রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন? বিএনপি যদি অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা করত, সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিত, তাহলে দোষ দিতে পারত।
সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, লাল চাঁদ হত্যাকাণ্ডের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। মূল দল বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান চালানোর কথাও বলা হয়েছে। যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অতীতে খারাপ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে বা যাঁদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা রয়েছে, তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিএনপি তো দায় এড়াচ্ছে না; বরং দায়িত্ব পালন করছে। অভিযোগ পাওয়ামাত্র বহিষ্কার করছে, প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছে। এরপরও বিভিন্ন মহল এটা নিয়ে হীন রাজনীতির চেষ্টা করছে। তা না হলে তারেক রহমান জবাব দাও, এই মিছিল কেন। তারেক রহমান কি রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন? বিএনপি যদি অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা করত, সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিত, তাহলে দোষ দিতে পারত।’
তবে বিএনপির নেতাদের কারও কারও অভিমত হচ্ছে, যেসব এলাকায় দলের ভালো নেতৃত্ব নেই, বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, সেসব এলাকায় নেতা-কর্মীরা বেশি বেপরোয়া। কারণ, ওই সব এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতার মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে।চাঁদাবাজির আরেক ধরন
বিএনপির নেতারা বলছেন, আল ইবাদত নামের এক ব্যক্তি ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ব্যবসায়ী দল’ নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে তোলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে হোটেল ভিক্টোরিতে তিনি কার্যালয় খোলেন। বিএনপির অঙ্গসংগঠন পরিচয় দিয়ে এই ব্যক্তি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়াসহ চাঁদা দাবি করেন। এ খবর জানতে পেরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী গতকাল শনিবার পল্টন থানায় মামলা করেন।
জানা গেছে, এ ব্যাপারে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর দলীয় প্যাডে একটি চিঠিও দেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আল ইবাদতকে গ্রেপ্তার করে।
নেতা-কর্মীরা কেন এত বেপরোয়া
একশ্রেণির নেতা-কর্মী বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়ে বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যন্ত দলের বড় একটি অংশ রাতারাতি টাকা বানানোর ধান্দায় অস্থির হয়ে পড়েছেন। বিগত আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট থেকে অনেকে উৎসাহী। তাই যার যেখানে প্রভাব আছে, সে সেখানে অবৈধ অর্থের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ জন্য এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, দখল, চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ—এমন কর্মকাণ্ড চলছে। যেখানেই এসব কাজে বাধা আসছে, সেখানেই অঘটন ঘটছে এবং ঘটনাক্রমে কিছু কিছু প্রকাশ পাচ্ছে।
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দীর্ঘ অপশাসন ও দুর্বৃত্তায়ন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এগুলোর রেশ এখনো কাটছে না। এর জন্য মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম এবং শুদ্ধি অভিযানের বিকল্প নেই।’
তবে বিএনপির নেতাদের কারও কারও অভিমত হচ্ছে, যেসব এলাকায় দলের ভালো নেতৃত্ব নেই, বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, সেসব এলাকায় নেতা-কর্মীরা বেশি বেপরোয়া। কারণ, ওই সব এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতার মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাঁরা দল ভারী করতে যাচাই–বাছাই না করে অনেককে দলে ভেড়াচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, ‘যাঁরা বিএনপির নামে নানা অপরাধ করছেন, তাঁরা দলের উল্লেখযোগ্য কেউ নন। হয়তো কোনো একটা কমিটিতে কোনো পদে আছেন বা ছিলেন। কিন্তু তাঁদের দায় পুরো দলকে নিতে হচ্ছে। তাঁদের কারণে বিএনপির ১৬ বছরের ত্যাগ, লড়াই–সংগ্রাম সবকিছু ধুলায় মিশে যাচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।’