অপমানের বদলা কিমের
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাক্টিভিস্ট ও পক্ষত্যাগীরা উত্তর কোরিয়ায় পিয়ংইয়ংবিরোধী বেলুন বার্তা পাঠান। ওই বেলুনে উত্তরের সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের স্ত্রীর বিকৃত ছবি সেঁটে দেয়া হয়।
তা দেখে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন কিম। স্ত্রীকে অপমানের বদলা নিতে কামান দাগেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে স্থাপিত যৌথ লিয়াজোঁ অফিস গুঁড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
এ ঘটনার জেরেই সিউলে সামরিক হামলা চালানোরও হুমকি দেয়া হয়েছিল। উত্তর কোরিয়ায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে বুধবার নিউইয়র্ক পোস্ট এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে পক্ষত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যাওয়া উত্তর কোরীয় নাগরিক ও দক্ষিণের অ্যাক্টিভিস্টরা উত্তরের শাসনব্যবস্থা ও এর নেতাদের সমালোচনা করে বেলুনের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি এ নিয়ে উত্তেজনার জেরে দক্ষিণের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন উত্তর কোরীয় নেতা কিম। তার বোন কিম ইয়ো জং সর্বসম্মুখেই দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘শত্রু’ বলে উল্লেখ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সমন্বয় কাজ চালাতে স্থাপন করা যৌথ লিয়াজোঁ অফিসও গুঁড়িয়ে দেয় উত্তর কোরিয়া।
গত মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাক্টিভিস্ট ও পক্ষত্যাগীরা মোট ২০টি বেলুনে প্রায় পাঁচ লাখ লিফলেট, ইউএসবি স্টিক ও এসবি কার্ড পাঠিয়েছে। কিছু বেলুনে কিমের বিকৃত ছবি সংবলিত কুবার্তা থাকায় লিয়াজোঁ অফিস গুঁড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন কিম।
এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়ায় নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মাতসেগোরা জানান, ওইদিন লিফলেটের সঙ্গে কিছু ছবিও আসে। ছবিগুলো কিমের স্ত্রী রি সোল জুর।
ফটোশপে বিকৃত করা সেই ছবি দেখেই ক্ষিপ্ত হন কিম। আলেকজান্ডার বলেন, স্ত্রীকে অপমান করে এমন বিকৃত ছবি পাঠানোয় ক্ষেপে গিয়ে কিম গত ১৬ জুন লিয়াজোঁ অফিস বোমায় উড়িয়ে দেন।
এদিকে, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজের দেশের ‘উজ্জ্বল সাফল্য’ দাবি করে তার প্রশংসা করেছেন কিম। শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ এ খবর জানিয়েছে। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল ওয়ার্কার্স পার্টির এক রাজনৈতিক বৈঠক শেষে কিম বলেন, ‘আমরা মারাত্মক ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিহত করেছি এবং স্থিতিশীল পরিস্থিতি ধরে রেখেছি।’
বিশ্বে করোনাভাইরাস যখন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছিল, তখনই উত্তর কোরিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং হাজার হাজার লোককে আইসোলেশনে থাকতে বাধ্য করে।
কিম ওই বৈঠকে করোনা মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যকর নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় কমিটির আদেশ মেনে নেয়ায় জনগণেরও প্রশংসা করেন।
এছাড়া তিনি করোনা রুখতে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান। কেসিএনএ জানায়, কিম মনে করেন করোনা মহামারী প্রতিরোধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ দ্রুত তুলে নেয়া হলে উত্তর কোরিয়ার ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারত।
উত্তর কোরিয়ায় এখনো কোনো করোনা রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া যায়নি। জানুয়ারির শেষ দিকে উত্তর কোরিয়া দ্রুত ভাইরাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়। সীমান্ত বন্ধ করার পাশাপাশি বিদেশিদের পিয়ংইয়ংয়ে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। স্কুলও বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে স্কুল খুললেও জনসমাবেশ নিষিদ্ধ।
তবে করোনা ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপ করায় খাদ্যের অভাবে ভুগছেন উত্তর কোরিয়ায় ৪০ শতাংশ মানুষ।