
মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » আর্ন্তজাতিক | এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | শিরোনাম | সাবলিড » পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান জে-২০এস উন্মোচন করল চীন
পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান জে-২০এস উন্মোচন করল চীন
বিবিসি২৪নিউজ,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ) প্রথমবারের মতো তাদের পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান জে-২০-এর দুই আসনের একটি সংস্করণকে নিজেদের বিমানবহরে যুক্ত করেছে। ‘জে-২০এস’ নামে পরিচিত এই উন্নত সংস্করণটি একজন পাইলট ছাড়াও একজন ওয়েপন সিস্টেমস অফিসার (WSO) বহনের সক্ষমতা রাখে, যা যুদ্ধের সময় মিশন ভাগাভাগি করে পরিচালনা এবং দীর্ঘমেয়াদি অপারেশনে কার্যকর সহায়তা দিতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জনের পর ২০২১ সালের অক্টোবরে জে-২০এস প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে। এর কয়েক বছরের ব্যবধানে এবার এটি আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানবাহিনীর কার্যকরী ইউনিটে যুক্ত হলো, যা চীনের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
জে-২০এস-এর অন্তর্ভুক্তির পেছনে অন্যতম একটি কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে এর দীর্ঘ পাল্লার সক্ষমতা। চীনের দাবি অনুযায়ী, এই বিমানটির কার্যক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ ও এফ-৩৫ এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ, যা দীর্ঘমেয়াদি মিশনে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম করে তুলেছে। যদিও জে-২০ আধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয়তা ও উন্নত ইনফরমেশন ডিসপ্লে সুবিধা সমৃদ্ধ, তবুও দীর্ঘ সময়ের মিশনে দ্বিতীয় একজন ক্রু সদস্য পাইলটের শারীরিক ও মানসিক চাপ হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন।
হেবেই প্রদেশের কাংঝোউতে অবস্থিত পিএলএএএফ-এর ১৭২তম এয়ার ব্রিগেডে প্রথমবারের মতো এই দুই আসনের বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। ব্রিগেডটি প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধ পরিস্থিতি উভয় রকম দায়িত্বেই অংশ নেয় এবং ২০১৮ সাল থেকে জে-২০ ব্যবহার করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এক আসনের জে-২০ ও দুই আসনের জে-২০এস-এর অপারেশন কৌশলে পার্থক্য থাকার কারণে নির্দিষ্ট ইউনিটে এর মোতায়েন করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, জে-২০এস কেবল প্রশিক্ষণ নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিমানের মতো ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি ড্রোন বা ‘ডার্ক সোর্ড’ টাইপের মনুষ্যবিহীন ‘উইংম্যান’ জঙ্গি বিমানের নেতৃত্বদানকারী বিমান হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এমনকি কিছু প্রযুক্তিগত রূপান্তরের মাধ্যমে এটি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ বা আকাশভিত্তিক কমান্ড পোস্ট হিসেবেও ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, আব্রাহাম আব্রামস, ‘China’s Stealth Fighter: The J-20 Mighty Dragon and the Growing Challenge to Western Air Dominance’ বইয়ের লেখক, বলেন, ‘জে-২০এস যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে চীনা বিমানবাহিনীতে ভবিষ্যতে একক আসনের চেয়ে দুই আসনের জে-২০ বেশি দেখা যেতে পারে। ঠিক যেমন ২০১০ সালের দিকে ফ্ল্যাঙ্কার সিরিজের যুদ্ধবিমানগুলো এক আসন থেকে দুই আসনে রূপান্তরিত হয়েছিল।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘জে-২০এস প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে স্ট্রাইক ও ইলেকট্রনিক অ্যাটাক মিশনের উপযোগী ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হতে পারে, যেমনটি রাশিয়ার সু-২৭ সিরিজের ক্ষেত্রে দেখা গেছে।’
যদিও জে-২০এস নিয়ে এখনো অনেক কিছু অনিশ্চিত রয়ে গেছে, তবে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীনের পিএলএএএফ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিসরে জে-২০ সংগ্রহ করছে, এবং সে বিবেচনায় দুই আসনের জে-২০এস এর উৎপাদনও অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্যাপক হারে বাড়তে পারে।