
বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য | প্রিয়দেশ | বিশেষ প্রতিবেদন | শিরোনাম » ভারতের ক্ষোভের মাঝে চীনমুখী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি?
ভারতের ক্ষোভের মাঝে চীনমুখী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি?
বিবিসি২৪নিউজ,কূটনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকা :বাংলাদেশে গত বছর প্রতিবাদের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এক কূটনীতিক দোলাচাল শুরু হয়েছে৷ প্রতিবেশী দেশে বহুদিনের মিত্র শেখ হাসিনার পতনে ভারত ক্ষুব্ধ হওয়ার পর চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করে চলেছে বাংলাদেশ৷ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’-এর নয়াদিল্লি-ভিত্তিক বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থির বলছেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক সম্ভবত আগে কখনও এত তীব্র টানাপোড়েনের সম্মুখীন হয়নি৷”
আওয়ামী লীগের নেত্রী ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া নিয়ে বাংলাদেশে জনরোষ রয়েছে৷ ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনে গদিচ্যুত হয়ে হেলিকপ্টারে করে ভারতের নয়াদিল্লিতে পৌঁছন হাসিনা৷
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলছেন, ভারত সরকার হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়েছে৷
৭৭ বছর বয়সি হাসিনা ইতিমধ্যেই প্রত্যর্পণ আদেশ অমান্য করেছেন৷ এরইমধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷
গত মার্চে প্রথম চীন সফরে যান অধ্যাপক ইউনূস৷ সেই সফরে তিনি প্রায় ২১০ কোটি (২.১ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছেন৷
বিএনপির নেতারাও চীন সফর করেছেন৷ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে চীন অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়৷পাকিস্তানের সঙ্গেও প্রীতির সম্পর্ক ক্রমশ বাড়াচ্ছে চীন ও বাংলাদেশ৷ ইতিমধ্যেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করেছে চীন৷ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র গুয়াও জিয়াকুন জানিয়েছেন, বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও শিল্পে তিনটি দেশ একে অপরকে সহায়তা করতে অত্যন্ত আগ্রহী৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলেন, বাংলাদেশ-চীনের বৈঠক লাভজনক হয়েছে৷ উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য ভারত চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়ার বিষয়টি কঠিন করেছে ভারত৷ অথচ চীন তাদের তিনটি হাসপাতালে বাংলাদেশিদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে৷
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে গতবছর সমুদ্রপথে বাণিজ্য শুরু হয়েছে৷ দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটও চালু হচ্ছে৷
এই বিষয়টি নিয়ে ভারতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রবীণ দোন্থি বলেন, ‘‘বর্তমান ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তার আদর্শিক ভিত্তির কারণে…ঢাকাকে এমন একটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে মেনে নিতে অনিচ্ছুক, যে সরকারকে তারা ইসলামপন্থি এবং ভারতের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন বলে মনে করে৷” তিনি যোগ করেন, ‘‘ঢাকা, ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের এখনকার মিত্রতায় সেই সিদ্ধান্ত আরও দৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷”ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ই একে অপরের উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷
ভারত বাংলাদেশের উপর একাধিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷ তারপরও দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মোঃ হুমায়ুন কবির৷ তিনি ভারতেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷
তবে তিনি সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঢাকার উচিত ‘সতর্কতার সাথে জোট গঠন করা’ এবং ভারসাম্য হিসেবে ‘বহুপাক্ষিক সম্পর্ক’ জোরদারের চেষ্টা করা৷দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা এখনও বিদ্যমান, কিন্তু উষ্ণতা চলে গেছে,” বলে মনে করেন তিনি৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, আঞ্চলিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে শিগগিরই পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম, বরং তারা সতর্ক করে দিচ্ছেন এই বলে যে, উত্তেজনা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
‘‘নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে নয়াদিল্লি সন্তুষ্ট হলে এবং ঢাকায় তাদের জন্য উপযুক্ত এমন কেউ ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে,” বলে মনে করছেন প্রবীণ দোন্থি৷
‘‘ঢাকার বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম,” বলেন তিনি৷
‘‘সহযোগিতা করার পরিবর্তে এটিকে দুর্বল করার চেষ্টা হতে পারে৷”