![BBC24 News](https://www.bbc24news.com/cloud/archives/fileman/bbc-logo.jpg)
সোমবার, ৫ জুন ২০২৩
প্রথম পাতা » জাতীয় | পরিবেশ ও জলবায়ু | প্রিয়দেশ | শিরোনাম | সাবলিড » বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বসবাসের ঝুঁকিতে ঢাকা
বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বসবাসের ঝুঁকিতে ঢাকা
বিবিসি২৪নিউজ,নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: পৃথিবীর গেলো ১০০ বছরে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এই তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ভয়ংকর হিসেবে অভিহিত করছেন। এতে পৃথিবীর দুই প্রান্তের বরফ গলতে শুরু করেছে। এর ফলশ্রুতিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। হুমকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশই। এই যখন পৃথিবীর বাস্তবতা, সেখানে আগামী ২০ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে। এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকানো না গেলে ঢাকা কি বসবাসের উপযুক্ত থাকবে? এমন প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি বড় নিয়ামক প্লাস্টিক। ঢাকায় প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা যেমন সীমিত, তেমনি নাগরিকরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়েও প্লাস্টিককে রুখে দিচ্ছেন না।
গত কয়েক দিনে ঢাকার তাপমাত্রায় ত্রাহী অবস্থা জনজীবনে। বর্তমানে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৯/৪০ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। এটি যদি ২০ বছরে আরও ৫ ডিগ্রি বাড়ে তাহলে তাপমাত্রার পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর সে অবস্থায় ঢাকা মহানগরীতে বেঁচে থাকা অসহনীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে— ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এমন এক পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ সোমবার (৫ জুন) পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে শামিল হই সকলে’,‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়, আগামী ২০ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা বাড়বে ৫ ডিগ্রি। এই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচটি বড় শহর আগামী কয়েক বছরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। গবেষকরা মনে করছেন, বর্তমান প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী—এই চারটি বিভাগীয় শহরে রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য বা তারতম্য কমে আসবে, ফলে সবসময় গরম অনুভূত হবে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে প্লাস্টিকের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী
এদিকে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) তাদের এক গবেষণায় জানায়, সারা দেশে প্রবহমান তীব্র দাবদাহের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী। ধূলিকণা এবং দূষিত গ্যাসের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে বর্তমানে অত্যধিক দূষিত বায়ুতে অবস্থিত ধূলিকণা এবং গ্যাসীয় পদার্থগুলো সূর্যের তাপমাত্রাকে শোষণ করে তাপপ্রবাহ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই তাপমাত্রার বৃদ্ধি কমাতে বায়ুদূষণ কমানো জরুরি।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় ছিল পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানো। সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা গত ১০০ বছরে এক ডিগ্রির কাছাকাছি বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা আরও বেড়ে গেলে তা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং, এখনই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের মোট বর্জ্যের শতকরা ২০-৩০ ভাগই প্লাস্টিক। ফলে যেখানে বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে, সেখানে প্লাস্টিকও পোড়ানো হচ্ছে। এতে বায়ুদূষণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার প্লাস্টিকের পুড়ে যাওয়া অংশগুলো মাটি ও পানিতে মিশে মাটির উর্বরতা ও পানির গুণগতমান নষ্ট করে। এতে মাটি ভেদ করে পানি গভীরে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভূখণ্ড। আজকের এই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পেছনের একটি বড় কারণ হচ্ছে এই প্লাস্টিক।’ তিনি তাপমাত্রা কমানোর জন্য বনায়ন ও জলাভূমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘একবার ব্যবহার করা (সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক) প্লাস্টিকের জিনিস মাটিতে ফেলার পর সেটি পচন ধরতে সময় লাগে ৩০০ থেকে ৪০০ বছর। এর আগে পর্যন্ত যেখানে এই প্লাস্টিক পড়ছে সেখানকার প্রাকৃতিক কর্মকাণ্ডও ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। মাটির যে গুণাগুণ, তাপ শোষণ ক্ষমতা, বৃক্ষরোপণ, সবুজায়নসহ সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, অক্সিজেন কমে যাওয়া, বায়ুদূষণ বেড়ে যাবার মতো ঘটনাগুলো বাড়তে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘পলিথিন আমাদের দেশে বন্ধ হয়েছে বহু আগে, তা করা হয়েছিল পরিবেশের ওপর এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া কমাতেই। কিন্তু দুঃখজনক হলো—আমাদের দেশে আইন হয়, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। কারণ, কোনও আইনই সমন্বিত পরিকল্পনা করে করা হয় না।’
শরীফ জামিল আরও বলেন, ‘প্লাস্টিকের এই দূষণের কারণেই মাটির শোষণ ক্ষমতা কমে গেছে। এতে গত কয়েক বছরে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আশপাশের জেলাগুলোর তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা সব সময় এখন বেশি থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঢাকা নগরী তো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।’